পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و\ه 8 উপনন্দের প্রবেশ উপনন্দ । ঠাকুর, আমার মনের ভার তো গেল না ! সন্ন্যাসী । কী হল বাবা ? উপনন্দ । মনে করেছিলেম, লক্ষেশ্বর যখন আমাকে অপমান করেছে তখন ওর কাছে আমি আর ঋণ স্বীকার করব না। তাই পুথিপত্র নিয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেম। সেখানে আমার প্রভূর বীণাটি নিয়ে তার ধুলো ঝাড়তে গিয়ে তারগুলি বেজে উঠল— অমনি আমার মনটার ভিতর যে কেমন হল সে আমি বলতে পারি নে ! সেই বীণার কাছে লুটিয়ে পড়ে বুক ফেটে আমার চোখের জল পড়তে লাগল। মনে হল আমার প্রভুর কাছে আমি অপরাধ করেছি। লক্ষেশ্বরের কাছে আমার প্রভু ঋণী হয়ে রইলেন, আর আমি নিশ্চিন্ত হয়ে আছি । ঠাকুর, এ তে আমার কোনো মতেই সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছা করছে, আমার প্রভুর জন্যে আজ আমি অসাধ্য কিছু একটা করি। আমি তোমাকে মিথ্যা বলছি নে, তার ঋণ শোধ করতে যদি আজ প্রাণ দিতে পারি তা হলে আমার খুব আনন্দ হবে— মনে হবে, আজকের এই সুন্দর শরতের দিন আমার পক্ষে সার্থক হল। সন্ন্যাসী। বাবা, তুমি যা বলছ সত্যই বলছ। উপনন্দ । ঠাকুর, তুমি তো অনেক দেশ ঘুরেছ, আমার মতো অকৰ্মণ্যকেও হাজার কার্বাপণ দিয়ে কিনতে পারেন এমন মহাত্মা কেউ আছেন? তা হলেই ঋণটা শোধ হয়ে যায়। এ নগরে যদি চেষ্টা করি তা হলে বালক ব’লে, ছোটো জাত ব’লে, সকলে আমাকে খুব কম দাম দেবে। সন্ন্যাসী। না বাবা, তোমার মূল্য এখানে কেউ বুঝবে না। আমি ভাবছি কী, যিনি তোমার প্রভুকে অত্যস্ত আদর করতেন সেই বিজয়াদিত্য বলে রাজাটার কাছে গেলে কেমন হয় ? উপনন্দ । বিজয়াদিত্য ? তিনি যে আমাদের সম্রাট ! সন্ন্যাসী । তাই নাকি ? উপনন্দ । তুমি জান না বুঝি ? সন্ন্যাসী। তা, হবে। নাহয় তাই হল। উপনন্দ । আমার মতো ছেলেকে তিনি কি দাম দিয়ে কিনবেন ? সন্ন্যাসী। বাবা, বিনা মূল্যে কেনবার মতো ক্ষমতা তার যদি থাকে তা হলে বিনা মূল্যেই কিনবেন। কিন্তু তোমার ঋণটুকু শোধ করে না দিতে পারলে তার এত ঋণ জমবে যে র্তার রাজভাগুর লজ্জিত হবে, এ আমি তোমাকে সত্যই বলছি।