পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শারদোৎসব । 8 * * উপনন্দ । ঠাকুর, এও কি সম্ভব ? সন্ন্যাসী । বাবা, জগতে কেবল কি এক লক্ষেশ্বরই সম্ভব ? তার চেয়ে বড়ো সম্ভাবনা কি আর-কিছুই নেই ? l উপনন্দ । আচ্ছ, যদি সে সম্ভব হয় তো হবে, কিন্তু আমি ততদিন পুথিগুলি নকল করে কিছু কিছু শোধ করতে থাকি ; নইলে আমার মনে বড়ো গ্লানি হচ্ছে । সন্ন্যাসী। ঠিক কথা বলেছ বাবা। বোঝা মাথায় তুলে নাও, কারও প্রত্যাশায় ফেলে রেখে সময় বইয়ে দিয়ে না। উপনন্দ । তা হলে চললেম ঠাকুর । তোমার কথা শুনে আমি মনে কত যে বল পেয়েছি সে অামি বলে উঠতে পারি নে। সন্ন্যাসী । তোমাকে দেখে আমিও যে কত বললাভ করেছি সে কথা কেমন করে বুঝবে ? এক কাজ করে বাবা, আমার খেলার দলটি ভেঙে গিয়েছে, আবার তাদের সকলকে ডেকে নিয়ে এসো গে । উপনন্দ। তা আনছি। কিন্তু ঠাকুর, তোমার দলটিকে আমার পুথি নকল করার কাজে লাগালে চলবে না। তারা আমার সব নষ্ট করে দেয় ; এত খুশি হয়ে করে যে বারণ করতেও পারি নে । [ প্রস্থান লক্ষেশ্বরের প্রবেশ লক্ষেশ্বর। ঠাকুর, অনেক ভেবে দেখলেম— পারব না। তোমার চেলা হওয়া আমার কর্ম নয়। যা পেয়েছি তা অনেক দুঃখে পেয়েছি, তোমার এক কথায় সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে শেষকালে হায় হায় ক’রে মরব ! আমার বেশি আশায় কাজ নেই। সন্ন্যাসী । সে কথাটা বুঝলেই হল। লক্ষেশ্বর। ঠাকুর, এবার একটুখানি উঠতে হচ্ছে। সন্ন্যাসী । ( উঠিয়া) তা হলে তোমার কাছ থেকে ছুটি পাওয়া গেল ! লক্ষেশ্বর। ( মাটি ও শুষ্কপত্র সরাইয়। কৌটা বাহির করিয়া) ঠাকুর, এইটুকুর জন্তে আজ সকাল থেকে সমস্ত হিসাব-কিতাব ফেলে রেখে এই জায়গাটার চার দিকে ভূতের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। এই-যে গজমোতি, এ আমি তোমাকেই আজ প্রথম দেখালেম ; আজ পর্যন্ত কেবলই এটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়িয়েছি ; তোমাকে দেখাতে পেরে মনটা তবু একটু হাল্কা হল। (সন্ন্যাসীর হাতের কাছে অগ্রসর করিয়াই, তাড়াতাড়ি ফিরাইয়া লইয়া)— ন হল না! তোমাকে যে এত বিশ্বাস করলেম, তবু এ জিনিস একটিবার তোমার হাতে তুলে দিই এমন শক্তি আমার নেই। এই-যে আলোতে