পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.# r 8૭૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী সে ब्राप्में বিছানায় শুইয়৷ আমার কান্না আসিল। পরদিন ক্লাসের একটা ফঁাকে শচীশ যখন গোলদিঘির ছায়ায় ঘাসের উপর আধ-শোওয়া অবস্থায় একটা বই পড়িতেছে আমি বিনা পরিচয়ে তার কাছে আবোল-তাবোল কী যে বকিলাম তার ঠিক নাই। শচীশ বই মুড়িয়া আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ চাহিয়া রহিল। তার চোখ যারা দেখে নাই তারা বুঝিবে না এই দৃষ্টি যে কী। শচীশ বলিল, যারা নিন্দ করে তারা নিন্দ ভালোবাসে বলিয়াই করে, সত্য ভালোবাসে বলিয়া নয়। তাই যদি হইল, তবে কোনো একটা নিন্দ যে সত্য নয় তাহা প্রমাণ করিবার জন্য ছট্‌ফট্‌ করিয়া লাভ কী ? f আমি বলিলাম, তবু দেখুন, মিথ্যাবাদীকে— শচীশ বাধা দিয়া বলিল, ওরা তো মিথ্যাবাদী নয়। আমাদের পাড়ায় পক্ষাঘাতে একজন কলুর ছেলের গা-হাত কাপে, সে কাজ করিতে পারে না। শীতের দিনে আমি তাকে একটা দামি কম্বল দিয়াছিলাম। সেইদিন আমার চাকর শিবু রাগে গর গর করিতে করিতে আসিয়া বলিল, বাবু, ও বেটার কাপুনি-টাপুনি সমস্ত বদমায়েশি !— আমার মধ্যে কিছু ভালো আছে এ কথা যার উড়াইয়া দেয় তাদের সেই শিবুর দশা। তারা যা বলে তা সত্যই বিশ্বাস করে। আমার ভাগ্যে একটা কোনো দামি কম্বল অতিরিক্ত জুটিয়াছিল, রাজ্যস্থদ্ধ শিবুর দল নিশ্চয় স্থির করিয়াছে, সেটাতে আমার অধিকার নাই। আমি তা লইয়া তাদের সঙ্গে ঝগড়া করিতে লজ্জা বোধ করি । ইহার কোনো উত্তর না দিয়া আমি বলিয়া উঠিলাম, এরা যে বলে আপনি নাস্তিক, সে কি সত্য ? শচীশ বলিল, ই, আমি নাস্তিক । আমার মাথা নিচু হইয়া গেল। আমি মেসের লোকের সঙ্গে ঝগড়া করিয়াছিলাম যে, শচীশ কখনোই নাস্তিক হইতে পারে না। শচীশ সম্বন্ধে গোড়াতেই আমি দুইটা মস্ত ঘা থাইয়াছি। আমি তাহাকে দেখিয়াই মনে করিয়াছিলাম, সে ব্রাহ্মণের ছেলে । মুখখানি যে দেবমূর্তির মতো সাদা-পাথরে কোদা। তার উপাধি শুনিয়াছিলাম মল্লিক ; আমাদেরও গায়ে মল্লিকউপাধিধারী এক ঘর কুলীন ব্রাহ্মণ আছে। কিন্তু জানিয়াছি, শচীশ সোনার-বেনে । আমাদের নিষ্ঠাবান কায়স্থের ঘর— জাতি-হিসাবে সোনার-বেনেকে অন্তরের সঙ্গে ঘৃণা করিয়া থাকি। আর, নাস্তিককে নরঘাতকের চেয়ে, এমনকি গো-খাদকের চেয়েও পাপিষ্ঠ বলিযা জানিতাম ।