পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| চতুরঙ্গ 8もA মুনসেফ জগমোহনকে সেবায়েত পদের অষোগ্য বলিয়া রায় দিলেন । জগমোহনের পক্ষের আইনজ্ঞরা আশা দিলেন এ রায় হাইকোর্টে টিকিবে না । জগমোহন বলিলেন, আমি আপিল করিব না। যে ঠাকুরকে আমি মানি না তাহাকেও আমি ফাকি দিতে পারিব না। দেবতা মানিবার মতে বুদ্ধি যাহাদের, দেবতাকে বঞ্চনা করিবার মতো ধর্মবুদ্ধিও তাহদেরই। ৰন্ধুরা জিজ্ঞাসা করিল, খাইবে কী ? তিনি বলিলেন, কিছু না খাবার জোটে তো খাবি খাইব । এই মকদ্দমা জয় লইয়া আস্ফালন করা হরিমোহনের ইচ্ছা ছিল না। র্তার ভয় ছিল পাছে দাদার অভিশাপের কোনো কুফল থাকে। কিন্তু পুরন্দর একদিন চামারদের বাড়ি হইতে তাড়াইতে পারে নাই, সেই আগুন তার মনে জলিতেছিল। কার দেবতা যে জাগ্রত এইবার সেটা তো প্রত্যক্ষ দেখা গেল। তাই পুরন্দর ভোরবেলা হইতে ঢাক-ঢোল আনাইয়া পাড়া মাথায় করিয়া তুলিল । জগমোহনের কাছে তার এক বন্ধু আসিয়াছিল, সে কিছু জানিত না । সে জিজ্ঞাসা করিল, ব্যাপারখানা কী হে ? জগমোহন বলিলেন, আজ আমার ঠাকুরের ধুম করিয়া ভাসান হইতেছে, তারই এই বাজনা । দুই দিন ধরিয়া পুরন্দর নিজে উদযোগ করিয়া ব্রাহ্মণভোজন করাইয়া দিল । পুরন্দর যে এই বংশের কুলপ্রদীপ, সকলে তাহ ঘোষণা করিতে লাগিল । দুই ভাইয়ে ভাগাভাগি হইয়া কলিকাতার ভদ্রাসন-বাটীর মাঝামাঝি প্রাচীর উঠিয়৷ গেল । ধর্ম সম্বন্ধে যেমনি হউক, থাওয়াপরা টাকাকড়ি সম্বন্ধে মানুষের একটা স্বাভাবিক স্ববুদ্ধি আছে বলিয়া মানবজাতির প্রতি হরিমোহনের একটা শ্রদ্ধা ছিল । তিনি নিশ্চয় ঠাওরাইয়াছিলেন তার ছেলে এবার নিঃস্ব জগমোহনকে ছাড়িয়া অন্তত আহারের গন্ধে তার সোনার খাচাকলের মধ্যে ধরা দিবে। কিন্তু বাপের ধর্মবুদ্ধি ও কর্মবুদ্ধি কোনোটাই পায় নাই, শচীশ তার পরিচয় দিল। সে তার জ্যাঠার সঙ্গেই রহিয়া গেল. o জগমোহনের চিরকাল শচীশকে এমনি নিতান্তই আপনার বলিয়া জানা অভ্যাস হইয়া গিয়াছিল যে আজ এই ভাগাভাগির দিনে শচীশ যে র্তারই ভাগে পড়িয়া গেল ইহাতে র্তার কিছুই আশ্চর্য বোধ হইল না। কিন্তু হরিমোহন তার দাদাকে বেশ চিনিতেন। তিনি লোকের কাছে রটাইতে লাগিলেন যে শচীশকে আটকাইয়া জগমোহন নিজের অন্নবস্ত্রের সংস্থান করিবার १#२* ¥_क }