পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী " مايو 88 শচীশ মাঝে মাঝে দেখিয়া গেল আমি খাইতে বসিয়াছি। তিন জনের মধ্যে আমার দশাটাই সব চেয়ে মন্দ। এই নাট্যের মুখ্য পাত্র ষে দুটি তাদের অভিনয়ের আগাগোড়াই আত্মগত— আমি আছি প্রকাশে, তার একমাত্র কারণ, আমি নিতান্তই গৌণ। তাহাতে এক-একবার নিজের ভাগ্যের উপরে রাগও হয়, অথচ উপলক্ষ্য সাজিয়া যেটুকু নগদ বিদায় জোটে সেটুকুর লোভও সামলাইতে পারি না। এমন মুশকিলেও পড়িয়াছি ! \ම কিছুদিন শচীশ পূর্বের চেয়ে আরও অনেক বেশি জোরের সঙ্গে করতাল বাজাইয়া নাচিয়া নাচিয় কীর্তন করিয়া বেড়াইল । তার পরে একদিন সে আসিয়া আমাকে বলিল, দামিনীকে আমাদের মধ্যে রাখা চলিবে না । আমি বলিলাম, কেন ? ந் সে বলিল, প্রকৃতির সংসৰ্গ আমাদের একেবারে ছাড়িতে হইবে। আমি বলিলাম, তা যদি হয় তবে বুঝিব আমাদের সাধনার মধ্যে মস্ত একটা ভুল আছে । শচীশ আমার মুখের দিকে চোখ মেলিয়া চাহিয়া রহিল। আমি বলিলাম, তুমি যাহাকে প্রকৃতি বলিতেছ সেটা তো একটা প্রকৃত জিনিস ; তুমি তাকে বাদ দিতে গেলেও সংসার হইতে সে তো বাদ পড়ে না। অতএব, সে যেন নাই এমন ভাবে যদি সাধনা করিতে থাক তবে নিজেকে ফঁাকি দেওয়া হইবে ; একদিন সে ফাকি এমন ধরা পড়িবে তখন পালাইবার পথ পাইবে না । শচীশ কহিল, ন্যায়ের তর্ক রাখো । আমি বলিতেছি কাজের কথা । স্পষ্টই দেখা যাইতেছে মেয়ের প্রকৃতির চর, প্রকৃতির হুকুম তামিল করিবার জন্যই নানা সাজে সাজিয়া তারা মনকে ভোলাইতে চেষ্টা করিতেছে । চৈতন্যকে আবিষ্ট করিতে না পারিলে তারা মনিবের কাজ হাসিল করিতে পারে না । সেইজন্য চৈতন্তকে খোলসা রাখিতে হইলে প্রকৃতির এই-সমস্ত দূতীগুলিকে যেমন করিয়া পারি এড়াইয়। চল চাই । আমি কী-একটা বলিতে যাইতেছিলাম, আমাকে বাধা দিয়া শচীশ বলিল, ভাই বিস্ত্রী, প্রকৃতির মায়া দেখিতে পাইতেছ না, কেননা সেই মায়ার ফাদে আপনাকে জড়াইয়াছ। যে সুন্দর রূপ দেখাইয়া আজ তোমাকে সে ভুলাইয়াছে, প্রয়োজনের দিন ফুরাইয়া গেলেই সেই রূপের মুখোশ সে খসাইয়া ফেলিবে ; যে তৃষ্ণার চশমায়