পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ ৪৬৯ তোমাদের কোনো ভক্ত বা এক মতলবে এক বন্দোবস্ত করিবেন, কোনো ভক্ত বা আর-এক মতলবে আর-এক বন্দোবস্ত করিবেন— মাঝখানে আমি কি তোমাদের দশপচিশের ঘুটি ? শচীশ অবাক হইয়। চাহিয়া রহিল। দামিনী কহিল, আমাকে তোমাদের ভালে| লাগিবে বলিয়া নিজের ইচ্ছায় তোমাদের মধ্যে আমি আসি নাই । আমাকে তোমাদের ভালে| লাগিতেছে না বলিয়া তোমাদের ইচ্ছায় আমি নড়িব না। বলিতে বলিতে মুখের উপর দুই হাত দিয়া তার আঁচল চাপিয়া সে কাদিয়া উঠিল, এবং তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে ছুটিয়া গিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিল । সেদিন শচীশ আর কীর্তন শুনিতে গেল না। সেই ছাদে মাটির উপরে চুপ করিয়া বসিয়া রহিল । সেদিন দক্ষিণহাওয়ায় দূর সমুদ্রের ঢেউয়ের শক পৃথিবীর বুকের ভিতরকার একটা কান্নার মতো নক্ষত্ৰলোকের দিকে উঠিতে লাগিল । আমি বাহির হইয়া গিয়া অন্ধকারে গ্রামের নির্জন রাস্তার মধ্যে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিলাম। 8 গুরুজি আমাদের দুজনকে যে রসের স্বৰ্গলোকে বাধিয়া রাখিবার চেষ্টা করিলেন, আজ মাটির পৃথিবী তাহাকে ভাঙিবার জন্য কোমর বাধিয়া লাগিল । এতদিন তিনি রূপকের পাত্রে ভাবের মদ কেবলই আমাদিগকে ভরিয়া ভরিয়া পান করাইয়াছেন, এখন রূপের সঙ্গে রূপকের ঠোকাঠুকি হইয়া পাত্রটা মাটির উপরে কাত হইয়া পড়িবার জো হইয়াছে । আসন্ন বিপদের লক্ষণ র্তার অগোচর রহিল না। শচীশ আজকাল কেমন-এক-রকম হইয়া গেছে। যে ঘুড়ির লখ ছিড়িয়া গেছে তারই মতো এখনও হাওয়ায় ভাসিতেছে বটে, কিন্তু পাক খাইয়া পড়িল বলিয়া, আর দেরি নাই। জপে তপে অৰ্চনায় আলোচনায় বাহিরের দিকে শচীশের কামাই নাই, কিন্তু চোখ দেখিলে বোঝা যায় ভিতরে ভিতরে তার পা টলিতেছে । _ আর, দামিনী আমার সম্বন্ধে কিছু আন্দাজ করিবার রাস্তা রাখে নাই । সে যতই বুঝিল গুরুজি মনে মনে ভয় এবং শচীশ মনে মনে ব্যথা পাইতেছে ততই সে আমাকে লইয়া আরও বেশি টানাটানি করিতে লাগিল। এমন হইল যে, হয়তো অামি শচীশ এবং গুরুজি বসিয়া কথা চলিতেছে এমন সময় দরজার কাছে আসিয়া দামিনী ডাক দিয়া গেল, ঐবিলাসবাবু, একবার আস্থন তো । শ্ৰীবিলাসবাবুকে কী যে তার দরকার তাও বলে না । গুরুজি আমার মুখের দিকে চান, শচীশ আমার মুখের נסיון ר