পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুরঙ্গ । 8翰y করিয়া বুঝিয়া লইয়াছিল যে দাবি করাই আমার প্রতি সব চেয়ে অনুগ্রহ করা। কোনো কোনো গাছ আছে যাদের ডালপালা ছাটিয়া দিলেই থাকে ভালো— দামিনীর সম্বন্ধে আমি সেই জাতের মানুষ । 晖 আমি যে লেখকের বই আনাইয়া দিলাম সে লোকটা একেবারে নির্জলা আধুনিক। তার লেখায় মসুর চেয়ে মানবের প্রভাব অনেক বেশি প্রবল। বইয়ের প্যাকেটটা গুরুজির হাতে আসিয়া পড়িল । তিনি ভুরু তুলিয়া বলিলেন, কী হে ভ্ৰবিলাস, এ-সব বই কিসের জন্য ? আমি চুপ করিয়া রহিলাম। গুরুজি দুইচারিটি পাতা উন্টাইয়া বলিলেন, এর মধ্যে সাত্ত্বিকতার গন্ধ তো বড়ো পাই না। লেখকটিকে তিনি মোটেই পছন্দ করেন না। আমি ফস করিয়া বলিয়া ফেলিলাম, একটু যদি মনোযোগ করিয়া দেখেন তো সত্যের গন্ধ পাইবেন । আসল কথা, ভিতরে ভিতরে বিদ্রোহ জমিতেছিল । ভাবের নেশার অবসাদে আমি একেবারে জর্জরিত। মানুষকে ঠেলিয়া ফেলিয়া সুদ্ধমাত্র মানুষের হৃদয়বৃত্তিগুলাকে লইয়া দিনরাত্রি এমন করিয়া ঘাটাঘাটি করিতে আমার যতদূর অরুচি হইবার তা হইয়াছে। গুরুজি আমার মুখের দিকে খানিক ক্ষণ চাহিয়া রহিলেন, তার পরে বলিলেন, আচ্ছ, তবে এক বার মনোযোগ করিয়া দেখা যাক। বলিয়া বইগুলা তার বালিশের নীচে রাখিলেন। বুঝিলাম, এ তিনি ফিরাইয়া দিতে চান না। নিশ্চয় দামিনী আড়াল হইতে ব্যাপারখানার আভাস পাইয়াছিল। দরজার কাছে আসিয়া সে আমাকে বলিল, আপনাকে যে বইগুলা আনাইয়া দিতে বলিয়াছিলাম সে কি এখনো আসে নাই ? আমি চুপ করিয়া রহিলাম। - গুরুজি বলিলেন, মা, সে বইগুলি তো তোমার পড়িবার যোগ্য নয় । । দামিনী কহিল, আপনি বুঝিবেন কী করিয়া ? গুরুজি ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া বলিলেন, তুমিই বা বুঝিবে কী করিয়া ? আমি পূর্বেই পড়িয়াছি, আপনি বোধ হয় পড়েন নাই। তবে অার প্রয়োজন কী ? আপনার কোনো প্রয়োজনে তো কোথাও বাধে না, আমারই কিছুতে বুঝি প্রয়োজন নাই ?