পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छछून्नत्र : {St একটা কথা দামিনী আমাকে বলিল না, আমিও তাকে বলিলাম না— চুপিচুপি কাজটা সারিতে হইল। দামিনীর ভাইঝি দুটির সৎপাত্রে যাহাতে বিবাহ হয় এবং ভাইপো কয়ট পড়াশুনা করিয়া মানুষ হয়, সেটা দেখিবার শক্তি দামিনীর ভাইদের ছিল না। তারা আমাদের ঘরে ঢুকিতে দেয় না, কিন্তু অর্থসাহায্য জিনিসটার জাতিকুল নাই, বিশেষত সেটাকে যখন গ্রহণমাত্র করাই দরকার— স্বীকার করা নিম্প্রয়োজন । কাজেই আমার অন্য কাজের উপর একটা ইংরেজি কাগজের সাব-এডিটারি লইতে হইল। আমি দামিনীকে না বলিয়া একটা উড়েবামুন বেহার এবং একটা চাকরের বন্দোবস্ত করিলাম। দামিনীও আমাকে না বলিয়া পরদিনেই সব-ক’টাকে বিদায় করিয়া দিল । আমি আপত্তি করিতেই সে বলিল, তোমরা কেবলই উল্ট বুঝিয়া দয়া কর। তুমি থাটিয়া হয়রান হইতেছ, আর আমি যদি না খাটিতে পাই তবে আমার সে দুঃখ আর সে লজ্জা বহিবে কে ? বাহিরে আমার কাজ আর ভিতরে দামিনীর কাজ, এই দুইয়ে যেন গঙ্গাযমুনার স্রোত মিলিয়া গেল। ইহার উপরে দামিনী পাড়ার ছোটাে ছোটাে মুসলমান মেয়েদের সেলাই শেখাইতে লাগিয়া গেল। কিছুতেই সে আমার কাছে হার মানিবে না, এই তার পণ । কলিকাতার এই শহরটাই যে বৃন্দাবন, আর এই প্রাণপণ খাটুনিটাই যে বাশির তান, এ কথাটাকে ঠিক স্বরে বলিতে পারি এমন কবিত্বশক্তি আমার নাই । কিন্তু দিনগুলি য়ে গেল সে হাটিয়াও নয়, ছুটিয়াও নয়, একেবারে নাচিয়া চলিয়া গেল । আরও একটা ফাল্গুন কাটিল । তার পর আর কাটিল না । সেবারে গুহা হইতে ফিরিয়া আসার পর হইতে দামিনীর বুকের মধ্যে একটা ব্যথা হইয়াছিল, সেই ব্যথার কথা সে কাহাকেও বলে নাই । যখন বাড়াবাড়ি হইয়া উঠিল তাকে জিজ্ঞাসা করাতে সে বলিল, এই ব্যথা আমার গোপন ঐশ্বর্য, এ আমার পরশমণি। এই যৌতুক লইয়। তবে আমি তোমার কাছে আসিতে পারিয়াছি, নহিলে আমি কি তোমার যোগ্য ? ডাক্তারেরা এ ব্যামোর একোজন একোরকমের নামকরণ করিতে লাগিল । তাদের কারও প্রেস্ক্রিপশনের সঙ্গে কারও মিল হইল না । শেষকালে ভিজিট ও দাওয়াইখানার দেনার আগুনে আমার সঞ্চিত স্বর্ণটুকু ছাই করিয়া তার লঙ্কাকাও সমাধা করিল এবং উত্তরকাণ্ডে মন্ত্রণা দিল, হাওয়া বদল করিতে হইবে। তথন হাওয়া ছাড়া আমার আর বস্তু কিছুই বাকি ছিল না।