পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব্যঙ্গকৌতুক & S ^ বুঝিতে পারি চণ্ডীদাস কেন লিথিয়াছেন— যে না দেশে বাশির ঘর সেই দেশে যাব, ডালে মূলে উপাড়িয়া সাগরে ভাসাব । কিন্তু পাঠক, আমার এ হৃদয়বেদনা তুমি কি বুঝিয়াছ ? উত্তর আমি বুঝিয়াছি। যদিও আমি কুলবধু নই। কারণ, আমি পুরুষমানুষ। কিন্তু আমার বাড়ির পাশেও একটি কন্সটের দল আছে। তাহার মধ্যে একটি ছোকরা নুতন বাশি অভ্যাস করিতে আরম্ভ করিয়াছে— প্রত্যুষ হইতে অধরাত্রি পর্যন্ত সারিগম সাধিতেছে। পূর্বাপেক্ষ অনেকটা সড়গড় হইয়াছে ; এখন প্রত্যেক স্বরে কেবলমাত্র আধস্থর সিকিসুর তফাত দিয়া যাইতেছে। কিন্তু আমার চিত্ত উদাসীন হইয়। উঠিয়াছে ; ঘরে আর কিছুতে মন টেকে না। বুঝিতে পারিতেছি রাধিক কেন বলিয়াছিলেন ‘বারণ কর লো সই, আর যেন খামের বঁশি বাজে না বাজে না । শুাম বোধ করি তখন নূতন সারিগম সাধিতেছিলেন। বুঝিতে পারিতেছি চণ্ডীদাস কেন লিখিয়াছিলেন— যে না দেশে বাশির ঘর সেই দেশে যাব, ডালে মূলে উপাড়িয়া সাগরে ভাসাব । বোধ হয় চণ্ডীদাসের বাসার পাশে কন্সটের দল ছিল । আমার বাড়ির পাশে যে ছোকরা বাশি অভ্যাস করে বোধ হয় তাহারই নাম মুকুন্দ ঘোষ । —শ্ৰীসংগীতপ্রিয় আমার এ কী হইল! এ কী বেদনা! নিদ্রা নাই, আহার নাই, মনে সুখ নাই! থাকিয়া থাকিয়া চমকি চমকি উঠি । কমলপত্র বীজন করিলে অসহ্য বোধ হয়, চন্দনপঙ্ক লেপন করিলে উপশম না হইয়া বিপরীত হয় । Åm শীতল সমীরণে সমস্ত জগতের তাপ নিবারণ করে, কেবল আমি হতভাগিনী সখীকে ডাকিয়া বলি, উন্থ উহু, সখী, দ্বার রোধ করিয়া দাও । সখীরা স্নেহভরে দেহ স্পর্শ করিলে চমকিয়া হাত ঠেলিয়া দিই। না জানি কোন স্পশে আরাম পাইব ।

  • |\98