পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

éरे ० ।। রবীন্দ্র-রচনাবলী তোমাদের আজ এত মূল্য, সেজন্য কি কিছু কৃতজ্ঞতা নাই ? মাটির নীচে তো উভয়ের সমান পদবী ছিল । T সেদিন প্রস্তাব হইল গৌরমুদ্র এবং তাম্রমুদ্রার জন্য স্বতন্ত্র টাকশাল স্থাপিত হউক । যদিও এক মহারানীর ছাপ উভয়ের উপর মারা হইয়াছে, তাই বলিয়া কোনোরূপ সাম্য আমরা স্বীকার করিতে চাহি না । আমরা এক ট্যাক, এক থলি, এক বাক্সে বাস করিব না। এমনকি সিকি দু-আনি ভাঙাইয়া পয়সা করা ও পয়সা ভাঙাইয়া সিকি দু-আনি করা এরূপ অপমানজনক আইনও আমরা পরিবর্তন করিতে চাহি । সাম্যবাদের গৌরব আমরা অস্বীকার করি না, কিন্তু তাহার একটা সীমা আছে। গিনি মোহরের সহিত সিকি দু-আনি এক সাম্যসীমার অন্তর্গত, কিন্তু তাই বলিয়া সিকি দু-অানির সহিত পয়সা ! সকলেই চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, কখনোই নহে! কখনোই নহে ! দু-আণনির তীব্র কণ্ঠস্বর সর্বোচ্চে শোনা গেল। যে খনিতে আমার আদিম উৎপত্তি সেই খনির মধ্যে প্রবেশ করিবার ইচ্ছায় আমি বসুমতীকে দ্বিধা হইতে অনুরোধ করিলাম, বসুমতী সে অনুরোধ পালন করিল না— দেয়াল ঘেষিয়া রক্তবর্ণ হইয়া দাড়াইয়া রহিলাম। এমন সময় এক ঝকঝকে নূতন আট-আনি গড়াইয়। এই সিকি দু-আনির সভার মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। সে দেখিলাম সকলকে ছাড়াইয়া উঠিল । সতেজে বস্তৃতা দিতে লাগিল, ঝনঝন শব্দে চারি দিকে করতালি পড়িল । কিন্তু আমি ঠাহর করিয়া শুনিলাম, বক্তৃতাটা যেমন হউক আওয়াজটা ঠিক রূপালি ছাদের নহে। মনে বড়ে সন্দেহ হইল। সভা যখন ভঙ্গ হইল, ধীরে ধীরে গড়াইয়া গড়াইয়া বহুসাহসপূর্বক তাহার গায়ের উপর গিয়া পড়িলাম— ঠন করিয়া আওয়াজ হইল, সে আওয়াজটা অত্যন্ত দিশি এবং গন্ধটাও দেখিলাম আমাদের স্বজাতীয়ের মতো। মহা রাগিয়া উঠিয়া সে কহিল, তুমি কোথাকার অসভ্য হে! আমি কহিলাম, বৎস, তুমিও যেখানকার আমিও সেখানকার । ছোড়াটা আমাদের নিম্নতন কুটুম্ব— আধ-পয়সা ; কোথা হইতে পারা মাখিয়া আসিয়াছে। তাহার রকম-সকম দেখিয়া হা-হাঃ শব্দে হাসিয়া উঠিলাম। : হাসির শব্দে জাগিয়া উঠিয়া দেখি, স্ত্রী পাশে শুইয়া কাদিতেছে। তৎক্ষণাৎ তাহার সঙ্গে ভাব করিয়া লইলাম। ঘটনাট আদ্যোপান্ত বিবৃত করিয়া বলিলাম, বড়ে ধরা পড়িয়াছে ! কিন্তু মনে করিতেছি আমিও কাল হইতে পারা মাখিয়া আপিসে যাইব । আমার স্ত্রী কহিল, তাহার অপেক্ষ পারা খাইয়া মরা ভালো । r У\Ф o o