পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমস্ত নাটককে ব্যাপ্ত করিয়া যে ভাবটা আছে সেটা আমাদের আশ্রমের বালকদের পক্ষে সহজ । বিশেষ বিশেষ ফুলে-ফলে হাওয়ায়-আলোকে আকাশে-পৃথিবীতে বিশেষ বিশেষ ঋতুর উৎসব চলিতেছে। সেই উংসব মানুষ যদি অন্তমনস্ক হইয়া অন্তরের মধ্যে গ্রহণ না করে তবে সে পার্থিব জীবনের একটি বিশুদ্ধ এবং মহৎ আনন্দ হইতে ৰঞ্চিত হয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের নানা কাজে নানা খেলায় মিলনের নানা উপলক্ষ্য আছে। মিলন ঠিকমতো ঘটিলেই, অর্থাৎ তাহ কেবলমাত্র হাটের মেলা বাটের মেলা না হইলে সেই মিলন নিজেকে কোনে না কোনো উৎসব-আকারে প্রকাশ করে। আমরা এই সংখ্যার শাস্তিনিকেতনে অন্য প্রবন্ধে বলিয়াছি, মিলন যেখানেই ঘটে, অর্থাৎ বহুর ভিতরকার মূল ঐক্যটি যেখানেই ধরা পড়ে, যাহারা বাহিরে পৃথক বলিয়া প্রতীয়মান তাহাদের অস্তরের নিত্য সম্বন্ধ যেখানেই উপলব্ধ হয়, সেখানেই স্থষ্টির অহেতুক অনির্বচনীয় লীলা প্রকাশ পায়। বহুর বিচিত্র ঐক্যসম্বন্ধই স্বষ্টি । মানুষ যেখানে বিচ্ছিন্ন সেখানে তাহার স্বজনকার্য দুর্বল ; সভ্যতা শব্দের অর্থই এই, মানুষের মিলনজাত একটি বৃহং জগৎ—এই জগতে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট বিধিব্যবস্থা ধর্মকর্ম শিল্পসাহিত্য আমোদ-আহ্লাদ সমস্তই একটি বিরাট স্বষ্টি । এই স্বজনের মূলশক্তি মানুষের সত্য সম্বন্ধ। মানুষ যেখানে বিচ্ছিন্ন, যেখানে বিরুদ্ধ, সেখানে তাহার স্বজনকার্য নিস্তেজ । সেখানে সে কেবল কলে-চালানো পুতুলের মতো চিরাভ্যাসের পুনরাবৃত্তি করিয়া চলে, আপন জ্ঞান প্রাণ প্রেমকে নব নব আকারে প্রকাশ করে না। মিলনের শক্তিই স্বজনের শক্তি । .. মানুষ যদি কেবলমাত্র মানুষের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করিত তবে লোকালয়ই মানুষের একমাত্র মিলনের ক্ষেত্র হইত। কিন্তু মানুষের জন্ম তো কেবল লোকালয়ে নহে, এই বিশাল বিশ্বে তাহার জন্ম। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে তাহার প্রাণের গভীর সম্বন্ধ আছে। তাহার ইন্দ্ৰিয়বোধের তারে তারে প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের স্পন্দন নানা রূপে রসে জাগিয়া উঠিতেছে। বিশ্বপ্রকৃতির কাজ আমাদের প্রাণের মহলে আপনিই চলিতেছে। কিন্তু মানুষের প্রধান স্বজনের ক্ষেত্র তাহার চিত্তমহলে। এই মহলে যদি দ্বার খুলিয়া আমরা বিশ্বকে আহবান করিয়া না লই, তবে বিরাটের সঙ্গে আমাদের পূর্ণ মিলন ঘটে না। বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে আমাদের চিত্তের মিলনের অভাব আমাদের মানবপ্রকৃতির পক্ষে একটা প্রকাও অভাব । f যে মানুষের মধ্যে সেই মিলন বাধা পায় নাই সেই মানুষের জীবনের তারে তারে প্রকৃতির গান কেমন করিয়া বাজে, ইংরেজ কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ Three Years she