পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«se রবীন্দ্র-রচনাবলী আনন্দ উপলৰি করিতেছে। ছখই তাহাকে এই আনন্দের অধিকারী করে। ঋণের সহিত ঋণশোধের বৈষম্যই বন্ধন এবং তাহাই কুত্ৰতা । —শাস্তিনিকেতন পত্র। আশ্বিন ও কার্তিক ১৩২৬ শারদোৎসবের ভিতরকার ধুয়ো সম্বন্ধে সবুজপত্রে ‘আমার ধর্ম প্রবন্ধে কবি লিখিয়াছেন— F শারদোৎসব থেকে আরম্ভ করে ফাঙ্কনী পর্যন্ত যতগুলি নাটক লিখেছি, যখন বিশেষ করে মন দিয়ে দেখি তখন দেখতে পাই প্রত্যেকের ভিতরকার ধুয়োটা ওই একই। রাজা বেরিয়েছেন সকলের সঙ্গে মিলে শারদোৎসব করবার জন্তে । তিনি খুজছেন র্তার সাথি । পথে দেখলেন ছেলেরা শরংপ্রকৃতির আনন্দে যোগ দেবার জন্যে উৎসব করতে বেরিয়েছে। কিন্তু একটি ছেলে ছিল— উপনন্দ– সমস্ত খেলাধুলো ছেড়ে সে তার প্রভুর ঋণ শোধ করবার জন্যে নিভৃতে বসে একমনে কাজ করছিল। রাজা বললেন, তার সত্যকার সাথি মিলেছে, কেননা ওই ছেলেটির সঙ্গেই শরৎপ্রকৃতির সত্যকার আনন্দের যোগ ; ওই ছেলেটি দুঃখের সাধনা দিয়ে আনন্দের ঋণ শোধ করছে : সেই দুঃখেরই রূপ মধুরতম। বিশ্বই যে এই দুঃখ-তপস্তায় রত ; অসীমের যে দান সে নিজের মধ্যে পেয়েছে অশ্রান্ত প্রয়াসের বেদনা দিয়ে সেই দানের সে শোধ করছে। প্রত্যেক ঘাসটি নিরলস চেষ্টার দ্বারা আপনাকে প্রকাশ করছে, এই প্রকাশ করতে গিয়েই সে আপন অন্তর্নিহিত সত্যের ঋণ শোধ করছে। এই-যে নিরস্তর বেদনায় তার আত্মোৎসর্জন, এই দুঃখই তো তার শ্ৰী, এই তো তার উৎসব, এতেই তো সে শরৎপ্রকৃতিকে সুন্দর করেছে, আনন্দময় করেছে । বাইরে থেকে দেখলে একে খেলা মনে হয়, কিন্তু এ তো খেলা নয়, এর মধ্যে লেশমাত্র বিরাম নেই। যেখানে আপন সত্যের ঋণশোধে শৈথিল্য সেখানেই প্রকাশে বাধা, সেইখানেই কদৰ্যত, সেইখানেই নিরানন্দ । আত্মার প্রকাশ আনন্দময়, এই জন্যেই সে দুখকে মৃত্যুকে স্বীকার করতে পারে ; ভয়ে কিম্বা আলস্তে কিম্বা সংশয়ে এই দুঃখের পথকে যে লোক এড়িয়ে চলে জগতে সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় । শারদোৎসবের ভিতরকার কথাটাই এই– ও তো গাছতলায় বসে বসে বঁাশির স্বর শোনবার কথা নয়। '* —সবুজপত্র। আশ্বিন ও কৃতিক ১৩২৪ ভান্থসিংহের পত্রাবলীতে প্রকাশিত একটি চিঠিতে ( ২৪ ভাদ্র ১৩২৯) কবি শারদোৎসব সম্বন্ধে লিখিতেছেন—