পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূরবী জানি মনে, ক্ষণে ক্ষণে চমকি উঠিবে মোর হিয়া তুমি আস নাই বলে, অকস্মাৎ রহিয়া রহিয়া আলাপ আলোক হাস্য প্রচ্ছন্ন গভীর অশ্রািজলে । আজিকে একেলা বসি শোকের প্রদোষ-অন্ধকারে, মৃত্যুতরঙ্গিণী:ধারা-মুখরিত ভাঙনের ধারে তোমারে শুধাই— আজি বাধা কি গো ঘুচিল চোখের, আলোকে সম্মুখে তব, উদয়শৈলের তলে আজি নব ছন্দে, নূতন আনন্দগানে । সে গানের সুর লাগিছে আমার কানে অশ্রুসাথে মিলিত মধুর প্ৰভাত-আলোকে আজি ; আছে তাহে সমাপ্তির ব্যথা, আছে তাহে নবতন আরম্ভের মঙ্গল-বারিতা ; আছে তাহে ভৈরবীতে বিদায়ের বিষন্ন মূৰ্ছনা, আছে ভৈরবের সুরে মিলনের আসন্ন অৰ্চনা | যে খেয়ার কর্ণধার তোমারে নিয়েছে সিন্ধুপারে আষাঢ়ের সজল ছায়ায়, তার সাথে বারে বারে নিশাস্তের নিদ্রা ভেঙে ব্যথায় বেজেছে মোর প্রাণে অজানা পথের ডাক, সূর্যস্তপারের স্বর্ণরেখা ইঙ্গিত করেছে মোরে । পুনঃ আজি তার সাথে দেখা মেঘে-ভরা বৃষ্টিঝরা দিনে । সেই মোরে দিল আনি ঝরে-পড়া কদম্বের কেশর-সুগন্ধি লিপিখানি তব শেষ-বিদায়ের । নিয়ে যাব। ইহার উত্তর নিজ হাতে করে আমি ওই খেয়া-’পরে করি ভরনা জানি সে কোন শান্ত শিউলি-ঝরার শুক্লারাতে, দক্ষিণের দোলা-লাগা পাখি-জাগা বসন্তাপ্ৰভাতে, নবমল্লিকার কোন আমন্ত্রণ-দিনে, শ্রাবণের ঝিল্লিমন্দ্ৰ-সঘন সন্ধ্যায়, মুখরিত প্লাবনের অশান্ত নিশীথ রাত্রে, হেমন্তের দিনান্তবেলায় কুহোলীগুণ্ঠনতলে । ধারণীতে প্ৰাণের খেলায় সংসারের যাত্রাপথে এসেছি তোমার বহু আগে, সুখে দুঃখে চলেছি আপন মনে ; তুমি অনুরাগে এসেছিলে আমার পশ্চাতে, বা শিখানি লয়ে হাতে মুক্ত মনে, দীপ্ত তেজে, ভারতীর বরমাল্য মাথে । আজ তুমি গেলে আগে ; ধরিত্রীর রাত্রি আর দিন তোমা হতে গেল খসি, সর্ব আবরণ করি লীন চিরন্তন হলে তুমি, মর্ত কবি, মুহুর্তের মাঝে । > の >