পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূরবী সমুদ্র হে সমুদ্র, স্তৰূচিত্তে শুনেছিনু গর্জন তোমার রাত্ৰিবোলা ; মনে হল গাঢ় নীল নিঃসীম নিদ্রার স্বপ্ন ওঠে কেঁদে কেঁদে । নাই, নাই তোমার সাত্মনা ; যুগ যুগান্তর ধরি নিরন্তর সৃষ্টির যন্ত্রণা তোমার রহস্য-গর্ভে ছিন্ন করি কৃষ্ণ আবরণ প্ৰকাশ সন্ধান করে । কত মহাদ্বীপ মহাবিন এ তরল রঙ্গশালে রূপে প্ৰাণে কত নৃত্যে গানে দেখা দিয়ে কিছুকাল, ডুবে গেছে নেপথ্যের পানে নিঃশব্দ গভীরে । হারানো সে চিহ্নহারা যুগগুলি মূর্তিহীন ব্যর্থতায় নিত্য অন্ধ আন্দোলন তুলি হানিছে তরঙ্গ তব । সব রূপ সব নৃত্য তার ফেনিল তোমার নীলে বিলীন দুলিছে একাকার । স্থলে তুমি নানা গান উৎক্ষেপে করেছ। আবর্জন, জলে তব এক গান- অব্যক্তের অস্থির গর্জন । ܔ হে সমুদ্র, একা আমি মধ্যরাতে নিদ্রাহীন চোখে কল্লোলমরুর মধ্যে দাড়াইয়া স্তব্ধ উধৰ্ব্বলোকে চাহিলাম ; শুনিলাম নক্ষত্রের রান্ধে রন্ধে বাজে আকাশের বিপুল ক্ৰন্দন ; দেখিলাম শূন্যমাঝে তীমাধারের আলোকব্যগ্ৰতা । কত শত মন্বন্তরে অস্ফুটের আচ্ছাদন দীর্ণ করি তীক্ষ রশ্মিঘাতে কালের বক্ষের মাঝে পেল স্থান প্রোজ্জ্বল প্ৰভাতে প্ৰকাশ-উৎসব-দিনে । যুগসন্ধ্যা কবে এল তার, ডুবে গেল অলক্ষ্যে অতলে । রূপনিঃস্ব হাহাকার - ধুলায় ধুলায় তার আঘাত লাগিছে ফিরে ফিরে । ছিল যা প্ৰদীপ্তরূপে নানা ছন্দে বিচিত্ৰ চঞ্চল আজ অন্ধ তরঙ্গের কম্পনে হানিছে শূন্যতল । W হে সমুদ্র, চাহিলাম। আপন গহন চিত্তপানে ; কোথায় সঞ্চয় তার, অন্ত তার কোথায় কে জানে । ওই শোনো সংখ্যাহীন সংজ্ঞাহীন অজানা ক্ৰন্দন অমূর্ত আঁধারে ফিরে, অকারণে জাগায় স্পন্দন বক্ষতলে । এক কালে ছিল রূপ, ছিল বুঝি ভাষা ; বিশ্বগীতিনিবারের তীরে তীরে বুঝি কত বাসা S 8 \S)