পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ভেবেছিলেম, আঁধার হলে পরে ফিরবে। ঘরে চেনা হাতের আদর পাবার তরে। কুকুর-ছানা বারে বারে এসে কাছে ঘেঁষে ঘেষে কেঁদো-কেঁদে চোখের চাওয়ায় শুধায় জনে জনে, “কোথায় গেল, কোথায় গেল, কেন তারে না দেখি অঙ্গনে ৷” আহার ত্যেজে বেড়ায় সে যে, এল না তার সাথি । আঁধার হল, জ্বলল ঘরে বাতি ; উঠল তারা ; মাঠে-মাঠে নামল নীরব রাতি । আতুর চােখের প্রশ্ন নিয়ে ফেরে কুকুর বাইরে ঘরে, ‘নাই সে কেন, যায় কেন সে, কাহার তরে ।” কেন যে তা সে-ই কি জানে | গেছে সে যার ডাকে কোনো কালে দেখে নাই যে তাকে । দিশাহারা দখিন হাওয়ার স্রোতে রক্তে তাহার কেমন এলোমেলো কিসের খবর এল | বুকে যে তার বাজল বাঁশি বহুযুগের ফাগুন-দিনের সুরে— কোথায় অনেক দূরে রয়েছে তার আপনি চেয়ে আরো আপন জন । তারেই অন্বেষণ জন্ম হতে আছে যেন মর্মে তারি লেগে, আছে যেন ছুটে চলার বেগে, আছে যেন চল-চপল চোখের কোণে জেগে । কোনো কালে চেনে নাই সে যারে সেই তো তাহার চেনাশোনার খেলাধুলা ঘোচায় একেবারে । আঁধার তারে ডাক দিয়েছে কেঁদে, আলোক তারে রাখল না। আর বেঁধে । চিরদিনের দাগ ওপার হতে এপার পানে খেয়া-নীেকো বেয়ে ভাগ্য নেয়ে দলে দলে আনছে ছেলে মেয়ে । সবাই সমান তারা এক সাজিতে ভরে-আনা চাপা ফুলের পারা। তাহার পরে অন্ধকারে কোন ঘরে সে পৌঁছিয়ে দেয় করে !