পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরপরতন Ridd বিশ্বযুদ্ধ লোকের সামনে এইখানে ফেলে রেখে দিয়ে চলে গেল ? [ উভয়ের প্রস্থান নাগরিক দলের প্রবেশ প্রথম। ওহে, এতগুলো রাজা একত্র হয়ে লড়াই বাধিয়ে দিলে, ভাবলুম, খুব তামাশা হবে- কিন্তু দেখতে দেখতে কী যে হয়ে গেল, বোঝাই গেল না। দ্বিতীয় । দেখলে না, ওদের নিজেদের মধ্যে গোলমাল লেগে গেল, কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না । তৃতীয়। পরামর্শ ঠিক রইল না যে। কেউ এগোতে চায় কেউ পিছোতে চায়— কেউ এদিকে যায় কেউ ওদিকে যায়, একে কি আর যুদ্ধ বলে ? কিন্তু লড়েছিল রাজা বিক্রমবাহু, সে কথা বলতেই হবে । প্রথম । সে যে হেরেও হারিতে চায় না । দ্বিতীয় । শেষকালে অস্ত্রটা তার বুকে এসে লািগল । তৃতীয় । সে যে পদে পদেই হারছিল, তা যেন টেরও পাচ্ছিল না । প্রথম । অন্য রাজারা তো তাকে ফেলে কে কোথায় পালাল, তার ঠিক নেই । { সকলের প্রস্থান অন্য দলের প্রবেশ প্রথম ! শুনেছি বিক্রমবাহু মরে নি । তৃতীয় | না, কিন্তু বিক্রমবাহুর বিচারটা কিরকম হল ? দ্বিতীয় | শুনেছি বিচারকর্তা স্বহস্তে রাজমুকুট পরিয়ে দিয়েছে ! তৃতীয় । এটা কিন্তু একেবারেই বোঝা গেল না । দ্বিতীয় । বিচারটা যেন কেমন বেখাপ রকম শোনাচ্ছে । প্রথম । তা তো বটেই। অপরাধ যা কিছু করেছে, সে তো ঐ বিক্রমবাহুই । দ্বিতীয় । আমি যদি বিচারক হাতুম, তা হলে কি আর আস্ত রাখতুম ? ওর আর চিহ্ন দেখাই যেত ୩ । তৃতীয় । কী জানি, বিচারকর্তাকে দেখি নে, তার বুদ্ধিটাও দেখা যায় না । প্রথম । ওদের বুদ্ধি বলে কিছু আছে কি ! এর মধ্যে সবই মৰ্জি । কেউ তো বলবার লোক নেই। দ্বিতীয় । যা বলিস ভাই, আমাদের হাতে শাসনের ভার যদি পড়ত, তা হলে এর চেয়ে ঢের ভালো করে চালাতে পারতুম | তৃতীয় । সে কি একবার করে বলতে ! | সকলের প্রস্থান ঠাকুরদাদা ও বিক্রমবাহুর প্রবেশ ঠাকুরদাদা । একি বিক্রমরাজ, তুমি পথে যে | বিক্রম। তোমার রাজা আমাকে পথেই বের করেছে। ঠাকুরদাদা । ঐ তো তার স্বভাব । বিক্রম। তার পরে আর নিজের দেখা নেই। ঠাকুরদাদা। সেও তার এক কৌতুক । i. বিক্রম । কিন্তু আমাকে এমন করে আর কতদিন এড়াবে ? যখন কিছুতেই তাকে রাজা বলে মনতেই চাই নি তখন কোথা থেকে কালবৈশাখীর মতাে এসে এক মুহূর্তে আমার ধ্বজ পতাকা ভেঙে উড়িয়ে ছারখার করে দিলে, আর আজ তার কাছে হার মানবার জন্যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি, তার আর দেখাই নেই।