পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS8 রবীন্দ্র-রচনাবলী শুকনো ধুলোয়, আপনি বেরিয়ে এসেছেন। আমার হাত ধরেছেন। সেই আমার অন্ধকারের মধ্যে যেমন করে হাত ধরতেন, হঠাৎ চমকে উঠে। গায়ে কাটা দিয়ে উঠত, এও সেইরকম। কে বললে তিনি নেই! সুরঙ্গমা, তুই কি বুঝতে পারছিস নে তিনি লুকিয়ে এসেছেন ? সুরঙ্গমার গান আমার আর হবে না দেরি, আমি শুনেছি। ওই বাজে তোমার ভেরী ॥ তুমি কি নাথ দাঁড়িয়ে আছ আমার যাবার পথে, মনে হয় যে ক্ষণে ক্ষণে মোর বাতায়ন হতে তোমায় যেন হেরি ৷ আমার স্বপন হল সারা এখন প্ৰাণে বীণা বাজায় ভোরের তারা । দেবার মতো যা ছিল মোর তোমার আশীর্বাদের মালা নেব (কেবল মাথে আমার ললাট ঘোরি ॥ সুদৰ্শন ৷৷ ও কে ও ! চেয়ে দেখ সুরঙ্গমা, এত রাত্রে এই আঁধারে পথে আরো একজন পথিক বেরিয়েছে যে ! সুরঙ্গমা | মা, এ যে বিক্রম রাজা দেখছি! সুদৰ্শন । বিক্রম রাজা ? সুরঙ্গমা | ভয় কোরো না । সুদৰ্শনা । ভয় ! ভয় কেন করব। ভয়ের দিন আমার আর নেই। বিক্ৰম । তুমিও চলেছ বুঝি । আমিও এই এক পথেরই পথিক । আমাকে কিছুমাত্র ভয় কোরো সুদৰ্শনা। ভালোই হয়েছে বিক্রমরাজ- আমরা দুজনে তীর কাছে পাশাপাশি চলেছি এ ঠিক হয়েছে। ঘর ছেড়ে বেরোবার মুখেই তোমার সঙ্গে আমার যোগ হয়েছিল— আজি ঘরে ফেরবার পথে সেই যোগই যে এমন শুভযোগ হয়ে উঠবে তা আগে কে মনে করতে পারত ! বিক্রম। কিন্তু তুমি যে হেঁটে চলেছ এ তো তোমাকে শোভা পায় না। যদি অনুমতি কর তা হলে এখনই রথ আনিয়ে দিতে পারি। সুদৰ্শনা। না না, অমন কথা বোলো না— যে-পথ দিয়ে তার কাছ থেকে দূরে এসেছি, সেই পথের সমস্ত ধুলোটা পা দিয়ে মাড়িয়ে মাড়িয়ে ফিরব তবেই আমার বেরিয়ে আসা সার্থক হবে। রথে করে নিয়ে গেলে আমাকে ফাকি দেওয়া হবে । সুরঙ্গমা। মহারাজ, তুমিও তো আজ ধূলোয়। এ পথে তো হাতি ঘোড়া রথ কারও দেখি নি । সুদৰ্শনা। যখন প্রাসাদে ছিলুম তখন কেবল সোনারুপের মধ্যেই পা ফেলেছি- আজ তার ধুলোর মধ্যে চলে আমার সেই ভাগ্যদোষ খণ্ডিয়ে নেব । আজ আমার সেই ধুলোমাটির রাজার সঙ্গে পদে পদে এই ধুলোমাটিতে মিলন হচ্ছে, এ সুখের খবর কে জানত।