পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ 988 সন্ন্যাসী । তুমি আমাকে ভণ্ডতপস্বী বলেছ। এই যদি তোমার অপরাধ হয় আমি তোমাকে মাপ করলেম | লক্ষেশ্বর। বাবাঠাকুর, শুধু মাপ করতে তো সকলেই পারে-- সে ফাকিতে আমার কী হবে। আমাকে একটা-কিছু ভালো রকম বর দিতে হচ্ছে । যখন দেখা পেয়েছি তখন শুধু হাতে ফিরছি নে । সন্ন্যাসী | কী বর চাই । লক্ষেশ্বর । লোকে যতটা মনে করে ততটা নয়, তবে কিনা আমার অল্পস্বল্প কিছু জমেছে— সে অতি যৎসামান্য — তাতে আমার মনের আকাঙক্ষ তো মিটছে না । শরৎকাল এসেছে, আর ঘরে বসে থাকতে পারছি নে— এখন বাণিজ্যে বেরোতে হবে । কোথায় গেলে সুবিধা হতে পারে আমাকে সেই সন্ধানটি বলে দিতে হবে- আমাকে আর যেন ঘুরে বেড়াতে না হয় । সন্ন্যাসী । আমিও সেই সন্ধানেই আছি, আর যেন ঘুরতে না হয় । লক্ষেশ্বর। বল কী ঠাকুর : সন্ন্যাসী । আমি সত্যই বলছি | লক্ষেশ্বর | ওঃ, তবে সেই কথাটাই বলো | বাবা, তোমরা আমাদের চেয়েও সেয়ানা | সন্ন্যাসী । তার সন্দেহ আছে ? লক্ষেশ্বর । (কাছে ঘেষিয়া বসিয়া মৃদুস্বরে) সন্ধােন কিছু পেয়েছ ? সন্ন্যাসী । কিছু পেয়েছি বৈকি। নইলে এমন করে ঘুরে বেড়ােব কেন ? লক্ষেশ্বর । (সন্ন্যাসীর পা চাপিয়া ধরিয়া) বাবাঠাকুর, আর-একটু খোলসা করে বলে । তোমার পা ছয়ে বলছি আমিও তোমাকে একেবারে ফাঁকি দেব না । কী খুজিছ বলে তো, আমি কাউকে বলব না । সন্ন্যাসী । তবে শোনো | লক্ষ্মী যে সোনার পদ্মটির উপরে পা দুখানি রাখেন। আমি সেই পদ্মটির খোজে আছি । লক্ষেশ্বর ) ও বাবা ! সে তো কম কথা নয় । তা হলে যে একেবারে সকল ল্যাঠাই চোকে । ঠাকুর, ভেবে ভেবে এ তো তুমি আচ্ছা বুদ্ধি ঠাওরেছ। কোনো গতিকে পদ্মটি যদি জোগাড় করে আনো তা হলে লক্ষ্মীকে আর তোমার খুঁজতে হবে না, লক্ষ্মীই তোমাকে খুঁজে বেড়াবেন ; এ নইলে আমাদের চঞ্চলা ঠাকরুনটিকে তো জব্দ করবার জো নেই | তোমার কাছে তার পা দুখানিই বাধা থাকবে । তা তুমি সন্ন্যাসী মানুষ, একলা পেরে উঠবে ? এতে তো খরচপত্র আছে। এক কাজ করো-না বাবা, আমরা ভাগে ব্যাবসা করি । সন্ন্যাসী । তা হলে তোমাকে যে সন্ন্যাসী হতে হবে । বহুকাল সোনা ছুতেই পাবে না । লক্ষেশ্বর । সে যে শক্ত কথা | সন্ন্যাসী | সব ব্যাবসা যদি ছাড়তে পার তবেই এ ব্যাবসা চলবে । লক্ষেশ্বর । শেষকালে দু কুল যাবে না তো ? যদি একেবারে ফাঁকিতে না পড়ি তা হলে তোমার তল্পি বয়ে তোমার পিছন পিছন চলতে রাজি আছি। সত্যি বলছি ঠাকুর, কারও কথায় বড়ো সহজে বিশ্বাস করি নে— কিন্তু তোমার কথাটা কেমন মনে লাগছে। আচ্ছা ! আচ্ছা রাজি ! তোমার চেলাই হব ঐ রে রাজা আসছে! আমি তবে একটু আড়ালে দাড়াই গে । বন্দিগণের গান ব্যাপ্ত পারতাপ তব বিশ্বময় হে ! দুষ্টদলন্দালন তব দণ্ড ভয়কারী, শত্ৰুজনদর্পহর। দীপ্ত তরবারি, সংকট শরণ্য তুমি দৈন্যদুখহারী, মুক্ত অবরোধ তব অভ্যুদয় হে!