পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VORO রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজা সোমপালের প্রবেশ সোমপাল। প্ৰণাম হই ঠাকুর । সন্ন্যাসী ৷ জয় হােক। কী বাসনা তোমার। সোমপাল | সে-কথা নিশ্চয় তোমার অগোচর নেই। আমি অখণ্ড রাজ্যের অধীশ্বর হতে চাই ଅଡ଼ୁ ! r সন্ন্যাসী । তা হলে গোড়া থেকে শুরু করো। তোমার খণ্ডরাজ্যটি ছেড়ে দাও । সোমপাল। পরিহাস নয়। ঠাকুর । বিজয়াদিত্যের প্রতাপ আমার অসহ্য বোধ হয়, আমি তার সামন্ত হয়ে থাকতে পারব না । সন্ন্যাসী। রাজন, তবে সত্য কথা বলি, আমার পক্ষেও সে ব্যক্তি অসহ্য হয়ে উঠেছে। সোমপাল। বল কী ঠাকুর ! সন্ন্যাসী । এক বৰ্ণও মিথ্যা বলছি নে ৷ তাকে বশ করবার জন্যেই আমি মন্ত্রসাধনা করছি । সোমপাল। তাই তুমি সন্ন্যাসী হয়েছ ? সন্ন্যাসী । তাই বটে । সোমপাল । মন্ত্রে সিদ্ধি লাভ হবে ? সন্ন্যাসী । অসম্ভব নেই। সোমপাল। তা হলে ঠাকুর, আমার কথা মনে রেখো । তুমি যা চাও আমি তোমাকে দেব । যদি সে বশ মানে তা হলে আমার কাছে যদি সন্ন্যাসী। তা বেশ, সেই চক্রবর্তী সম্রাটকে আমি তােমার সভায় ধরে আনব । সোমপাল । কিন্তু বিলম্ব করতে ইচ্ছা করছে না । শরৎকাল এসেছে- সকাল বেলা উঠে বেতসিনীর জলের উপর যখন আশ্বিনের রৌদ্র পড়ে তখন আমার সৈন্যসামন্ত নিয়ে দিগবিজয়ে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। যদি আশীৰ্বাদ কর তা হলে— সন্ন্যাসী । কোনো প্রয়োজন নেই ; শরৎকালেই আমি তাকে তোমার কাছে সমর্পণ করব, এই তো উপযুক্ত কাল । তুমি তাকে নিয়ে কী করবে। সোমপাল। আমার একটা কোনাে কাজে লাগিয়ে দেব- তার অহংকার দূর করতে হবে। সন্ন্যাসী। এ তো খুব ভালো কথা। যদি তার অহংকার চূর্ণ করতে পার তা হলে ভারি খুশি হব। সোমপাল । ঠাকুর, চলে আমার রাজভবনে । সন্ন্যাসী । সেটি পারছি নে। আমার দলের লোকদের অপেক্ষায় আছি। তুমি যাও বাবা। আমার জন্যে কিছু ভেবো না । তোমার মনের বাসনা যে আমাকে ব্যক্ত করে বলেছ এতে আমার ভারি আনন্দ হচ্ছে । বিজয়াদিত্যের যে এত শত্রু জমে উঠেছে তা তো আমি জানতেম না ! সোমপাল । তবে বিদায় হই । প্ৰণাম । [প্ৰস্থান (পুনশ্চ ফিরিয়া আসিয়া) আচ্ছা ঠাকুর, তুমি তো বিজয়াদিত্যকে জান, সত্য করে বলে দেখি, লোকে তার সম্বন্ধে যতটা রটনা করে ততটা কি সত্য ? সন্ন্যাসী । কিছুমাত্র না। লোকে তাকে একটা মস্ত রাজা বলে মনে করে কিন্তু সে নিতান্তই সাধারণ মানুষের মতো। তার সাজসজ্জা দেখেই লোকে ভুলে গেছে। সোমপাল। বলো কী ঠাকুর ! হা হা হা হা ! আমিও তাই ঠাউরেছিলেম। আঁ্যা ! নিতান্তই সাধারণ মানুষ ! সন্ন্যাসী। আমার ইচ্ছে আছে, আমি তাকে সেইটে আচ্ছা করে বুঝিয়ে দেব। সে যে রাজার পোশাক পরে ফাঁকি দিয়ে অন্য পাঁচ জনের চেয়ে নিজেকে মস্ত একটা কিছু বলে মনে করে আমি তার সেই ভুলটা একেবারে ঘুচিয়ে দেব। " সোমপাল । ঠাকুর, তুমি সব ফাস করে দাও। ও যে মিথ্যে রাজা, ভুয়ো রাজা, সে যেন আর ছাপা না থাকে । ওর বড়ো অহংকার হয়েছে।