পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WD SR 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী লক্ষেশ্বরের প্রবেশ লক্ষেশ্বর। এই যে, এ লোকটি এখানে এসে জুটেছে। (চোখ টিপিয়া) ঠাকুরদা, একে চিনতে পেরেছ কি, ইনি একজন সন্ধানী লোক । শেখর । সেইজন্যেই তো তোমাকে ছেড়ে এখন ঐকে ধরেছি। লক্ষেশ্বর । একে দেখে ঠাউরেছ ওঁর সঞ্চয় কিছু আছে, আমার মতো অকিঞ্চন না। শেখর । ঠিক বটে। সেইজন্যে লেগে আছি, আদায় না করে ছােড়ছি নে । লক্ষেশ্বর । কিন্তু এতক্ষণ তোমরা তিনজনে মিলে চুপিচুপি কী পরামর্শ করছিলে বলে দেখি ? সন্ন্যাসী । আমাদের সেই সোনার পদ্মের পরামর্শ । লক্ষেশ্বর । আঁ্যা ! এরই মধ্যে সমস্ত ফাস করে বসে আছ ? বাবা, তুমি এই ব্যাবসবুদ্ধি নিয়ে সোনার পদ্মার আমদানি করবে ? তবেই হয়েছে। তুমি যেই মনে করলে আমি রাজি হলেম না। আমনি তাড়াতাড়ি অংশীদার খুঁজতে লেগে গৈছা! কিন্তু এ-সব কি ঠাকুরদার কর্ম। ওঁর পুঁজিই বা কী । সন্ন্যাসী । তুমি খবর পাও নি। কিন্তু একেবারে পুঁজি নেই তা নয়। ভিতরে ভিতরে জমিয়েছে। লক্ষেশ্বর। (ঠাকুরদাদার পিঠ চাপড়াইয়া) সত্যি না কি ঠাকুরদা ? বড়ো তো ফাকি দিয়ে আসছা! তোমাকে তো চিনতোম না । লোকে আমাকেই সন্দেহ করে, তোমাকে তো স্বয়ং রাজাও সন্দেহ করে মৃত্যু হল এতদিনে ঋনাতল্লাশ পড়ে যেত। আমি তো পদ গুপ্তচরের ভয় ধরে চকবক କ୍ଷୌଥ୍ (N | ঠাকুরদাদা। তবে যে আজ সকালে ছেলে তাড়াবার বেলায় উর্ধ্বস্বরে চােবে, তেওয়ারি, গিরধারিলালকে হাঁক পড়েছিলে! লক্ষেশ্বর । যখন নিশ্চয় জানি হাক পাড়লেও কেউ আসবে না, তখন উৰ্ব্বস্বরের জোরেই আসর গরম করে তুলতে হয়। কিন্তু বলে তো ভালো করলেম না। মানুষের সঙ্গে কথা কবার তাে বিপদই ঐ | সেইজন্যেই কারও কাছে ঘোষি নে । দেখো দাদা, ফাস করে দিয়ে না ! ঠাকুরদাদা। ভয় নেই তোমার। লক্ষেশ্বর । ভয় না থাকলেও তবু ভয় ঘোচে কই । ঐ যে ঝাকে ঝাকে মানুষ আসছে। ঐ দেখছি না দূরে— আকাশে যে ধূলাে উড়িয়ে দিয়েছে! সবাই খবর পেয়েছে স্বামী অপূর্বানন্দ এসেছেন। এবার পায়ের ধুলো নিয়ে তোমার পায়ের তেলো হাঁটু পর্যন্ত খইয়ে দেবে। যাই হােক তুমি যে-রকম আলগা মানুষ দেখছি, সেই কথাটা আর কারও কাছে ফাস কোরো না— অংশীদার আর বাড়িয়াে না। | श्रश्ट्रॉ* সন্ন্যাসী । ঠাকুরদা, আর তো দেরি করলে চলবে না। লোকজন জুটতে আরম্ভ করেছে, ‘পুত্র দাও। ‘ধন দাও" করে আমাকে একেবারে মাটি করে দেবে । ছেলেগুলিকে এইবেলা ডাকে । তারা ধন চায় না, পুত্র চায় না, তাদের সঙ্গে খেলা জুড়ে দিলেই পুত্রধনের কাঙািলরা আমাকে ত্যাগ করবে। ঠাকুরদাদা। ছেলেদের আর ডাকতে হবে না। ঐ যে আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এল বলে। [ দ্রুত প্ৰস্থান শেখরকে সঙ্গে লইয়া ছেলেদের প্রবেশ ছেলেরা। সন্ন্যাসী ঠাকুর । সন্ন্যাসী ঠাকুর ! সন্ন্যাসী | কী বাবা | ছেলেরা। তুমি আমাদের নিয়ে খেলো। সন্ন্যাসী । সে কি হয় বাবা ! আমার কি সে ক্ষমতা আছে ? তোমরা আমাকে নিয়ে খেলাও ! ছেলেরা । কী খেলা খেলবে ? সন্ন্যাসী । আমরা আজ শারদোৎসব খেলিব । প্ৰথম বালক । সে বেশ হবে ।