পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তধারা \80 দেখো, দাদা, আমার গায়ে কিন্তু কীটা দিয়ে উঠছে | } রঞ্জ, তুই বেজায় ভাতু। চল চল । MR { সকলের প্রস্থান যুবরাজ অভিজিৎ ও রাজকুমার সঞ্জয়ের প্রবেশ সঞ্জয় । বুঝতে পারছি নে, যুবরাজ, রাজবাড়ি ছেড়ে কেন বেরিয়ে যােচ্ছ ? অভিজিৎ । সব কথা তুমি বুঝবে না । আমার জীবনের স্রোত রাজবাড়ির পাথর ডিঙিয়ে চলে যাবে এই কথাটা কানে নিয়েই পৃথিবীতে এসেছি। সঞ্জয় | কিছুদিন থেকেই তোমাকে উতলা দেখছি। আমাদের সঙ্গে তুমি যে বাধনে বাধা সেটা তোমার মনের মধ্যে আলগা হয়ে আসছিল । আজ কি সেটা ছিড়ল । অভিজিৎ । ঐ দেখো সঞ্জয়, গৌরীশিখরের উপর সূর্যাস্তের মূর্তি | কোন আগুনের পাখি মেঘের ডানা মেলে রাত্রির দিকে উড়ে চলেছে। আমার এই পথযাত্রার ছবি অস্তসূর্য আকাশে এঁকে দিলে। সঞ্জয় । দেখছি না, যুবরাজ, ঐ যন্ত্রের চূড়াটা সূর্যস্তমেঘের বুক ফুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ? যেন উড়ন্ত পাখির বুকে বাণ বিধেছে, সে তার ডানা বুলিয়ে রাত্রির গহবরের দিকে পড়ে যাচ্ছে। আমার এ ভালো লাগছে না। এখন বিশ্রামের সময় এল । চলো, যুবরাজ, রাজবাড়িতে | অভিজিৎ | যেখানে বাধা সেখানে কি বিশ্রাম আছে ? সঞ্জয় । রাজবাড়িতে যে তোমার বাধা, এতদিন পরে সে কথা তুমি কী করে বুঝলে । অভিজিৎ । বুঝলুম, যখন শোনা গেল মুক্তধারায় ওরা বাধ বেঁধেছে। সঞ্জয় | তোমার এ কথার অর্থ আমি পাই নে । অভিজিৎ । মানুষের ভিতরকার রহস্য বিধাতা বাইরের কোথাও না কোথাও লিখে রেখে দেন ; আমার অন্তরের কথা আছে ঐ মুক্তধারার মধ্যে। তারই পায়ে ওরা যখন লোহার বেড়ি পরিয়ে দিলে তখন হঠাৎ যেন চমক ভেঙে বুঝতে পারলুম। উত্তরকুটের সিংহাসনই আমার জীবনস্রোতের বাঁধ। পথে বেরিয়েছি তারই পথ খুলে দেবার জন্যে। সঞ্জয় । যুবরাজ, আমাকেও তোমার সঙ্গী করে নাও । অভিজিৎ । না ভাই, নিজের পথ তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমার পিছনে যদি চল তা হলে আমিই তোমার পথকে আড়াল করব । সঞ্জয় । তুমি অত কঠোর হােয়ে না, আমাকে বাজছে। অভিজিৎ । তুমি আমার হৃদয় জান, সেইজন্যে আঘাত পেয়েও তুমি আমাকে বুঝবে। সঞ্জয় । কোথায় তোমার ডাক পড়েছে তুমি চলেছ, তা নিয়ে আমি প্রশ্ন করতে চাই নে। কিন্তু যুবরাজ, এই যে সন্ধে হয়ে এসেছে, রাজবাড়িতে ঐ যে বন্দীরা দিনাবসানের গান ধরলে, এরও কি কোনো ডাক নেই ? যা কঠিন তার গীেরব থাকতে পারে, কিন্তু যা মধুর তারও মূল্য আছে। অভিজিৎ। ভাই, তারই মূল্য দেবার জন্যেই কঠিনের সাধনা ৷ সঞ্জয় । সকালে যে আসনে তুমি পূজায় বস, মনে আছে তো সেদিন তার সামনে একটি শ্বেত পদ্ম দেখে তুমি অবাক হয়েছিলে ? তুমি জগবার আগেই কোন ভোরে ঐ পদ্মটি লুকিয়ে কে তুলে এনেছে, জানতে দেয় নি সে কো— কিন্তু এইটুকুর মধ্যে কত সুধাই আছে সে কথা কি আজ মনে করবার নেই ? সেই ভীরু যে আপনাকে গোপন করেছে, কিন্তু আপনার পূজা গোপন করতে পারে নি, তার মুখ তোমার মনে পড়ছে না ? অভিজিৎ । পড়ছে বৈকি। সেইজন্যেই সইতে পারছি নে ঐ বীভৎসটাকে যা এই ধরণীর সংগীত রোধ করে দিয়ে আকাশে লোহার দাত মেলে অট্টহাস্য করছে । স্বৰ্গকে ভালো লেগেছে বলেই দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করতে যেতে দ্বিধা করি নে । সঞ্জয়। গোধূলির আলোটি ঐ নীল পাহাড়ের উপরে মুছিত হয়ে রয়েছে, এর মধ্যে দিয়ে একটা কান্নার মূর্তি তোমার হৃদয়ে এসে পীেচচ্ছে না ? با