পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\8N2 রবীন্দ্র-রচনাবলী অভিজিৎ । হা, পেঁচাচ্ছে। আমারও বুক কান্নায় ভরে রয়েছে। আমি কঠোরতর অভিমান রাখি নে। চেয়ে দেখাে ঐ পাখি দেবদারু-গাছের চূড়ার ডালটির উপর একলা বসে আছে ; ও কি নীড়ে যাবে, না, অন্ধকারের ভিতর দিয়ে দূর প্রবাসের অরণ্যে যাত্রা করবে। জানি নে— কিন্তু ও যে এই সূর্যাস্তের আকাশের দিকে চুপ করে চেয়ে আছে সেই চেয়ে থাকার সুরটি আমার হৃদয়ে এসে বাজছে। সুন্দর এই পৃথিবী। যা-কিছু আমার জীবনকে মধুময় করেছে সে সমস্তকেই আজ আমি নমস্কার করি। বাঁটুর প্রবেশ বটু । যেতে দিলে না, মেরে ফিরিয়ে দিলে । অভিজিৎ । কী হয়েছে, বটু— তোমার কপাল ফেটে রক্ত পড়ছে যে ! বটু। আমি সকলকে সাবধান করতে বেরিয়েছিলুম, বলছিলুম, “যেয়াে না ও পথে, ফিরে যাও। অভিজিৎ । কেন, কী হয়েছে ? বটু। জান না যুবরাজ ? ওরা যে আজ যন্ত্রবেদীর উপর তৃষ্ণারাক্ষসীর প্রতিষ্ঠা করবে। মানুষ-বলি চায় | সঞ্জয় । সে কী কথা ? বটু। সেই বেদী গাথবার সময় আমার দুই নাতির রক্ত ঢেলে দিয়েছে। মনে করেছিলুম পাপের বেদী আপনি ভেঙে পড়ে যাবে । কিন্তু এখনো তো ভাঙল না, ভৈরব তো জাগলেন না | অভিজিৎ । ভাঙবে । সময় এসেছে। বটু । (কাছে আসিয়া চুপে চুপে) তবে শুনেছ বুঝি ? ভৈরবের আহবান শুনেছ ? অভিজিৎ । শুনেছি। বটু। সর্বনাশ ! তবে তো তোমার নিস্কৃতি নেই। অভিজিৎ । না, নেই | বটু। ঐ দেখছি না ? আমার মাথা দিয়ে রক্ত পড়ছে, সর্বাঙ্গে ধুলো । সইতে পারবে কি, যুবরাজ, যখন বক্ষ বিদীর্ণ হয়ে যাবে ? অভিজিৎ । ভৈরবের প্রসাদে সইতে পারব | বটু। চারি দিকে সবাই যখন শত্রু হবে ? আপনি লোক যখন ধিক্কার দেবে ? অভিজিৎ । সইতেই হবে । বটু। তা হলে ভয় নেই ? অভিজিৎ | না, ভয় নেই। বটু। বেশ বেশ। তা হলে বটুকে মনে রেখো। আমিও ঐ পথে । ভৈরব আমার কপালে এই-যে রক্ততিলক ঐকে দিয়েছেন তার থেকে অন্ধকারেও আমাকে চিনতে পারবে । 2 [বটুর প্রস্থান উদ্ধব । নন্দিসংকটের পথ কেন খুলে দিলে যুবরাজ ? অভিজিৎ । শিবতরাইয়ের লোকেদের নিত্যদুৰ্ভিক্ষ থেকে বীচাবার জন্যে। উদ্ধাব । মহারাজ তো তাদের সাহায্যের জন্যে প্ৰস্তুত, তার তো দয়ামায়া আছে । অভিজিৎ, ডান-হাতের কার্পণ্য দিয়ে পথ বন্ধ করে বঁা-হাতের বদান্যতায় বঁাচানো যায় না। তাই ওদের অন্ন-চলাচলের পথ খুলে দিয়েছি। দয়ার উপর নির্ভর করার দীনতা আমি দেখতে পারি। নে | উদ্ধব। মহারাজ বলেন, নন্দিসংকটের গড় ভেঙে দিয়ে তুমি উত্তরকুটের ভোজনপত্রের তলা খসিয়ে দিয়েছ । । ভুঞ্জিৎ সিদিন পর্বত্রইগের অন্নজীবী হয়ে থাকবার দৃতি থেকে উত্তরকৃটকে মুক্তি T