পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার অধ্যায় 8SS লয় বললে, “আবার বলছি অন্তু, কিছু নাও আমার হাত থেকে- নাও এই আমার গলার হার ।” এই বলে পায়ের উপর রাখল হার । “কিছুতেই না ।” “কেন, অভিমান ?” “হা, অভিমান। এমন দিন ছিল তখন যদি দিতে পারতুম গলায়— আজ দিলে পকেটে, অন্নাভাবের গর্তটার মধ্যে । ভিক্ষে নেব না তোমার কাছে।” এলা অতীনের পায়ের কাছে লুটিয়ে বললে, “নাও আমাকে তোমার সঙ্গিনী করে ।” “লাভ দেখিয়ো না, এলা। অনেকবার বলেছি আমার পথ তোমার নয় ।” “তবে সে-পথ তোমারও নয় । ফিরে এসো, ফিরে এসো ।” “পথ আমার নয়, আমিই পথের। গলার ফাসকে গলার গয়না কেউ বলে না।” “অস্তু, নিশ্চয় জেনো, তুমি চলে গেলে একমুহূর্ত আমি বঁচব না। তুমি ছাড়া আর কেউ নেই আমার, এ কথায় আজ যদি বা সন্দেহ কর, একান্ত মনে আশা করি মৃত্যুর পরে সে সন্দেহ সম্পূর্ণ ঘোচাবার একটা কোনো রাস্তা কোথাও আছে ।” হঠাৎ অতীন লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। তীরের মতো তীক্ষ হুইসলের শব্দ এল দূর থেকে । চমকে বলে উঠল, “চেললুম।” এলা তাকে জড়িয়ে ধরলে ; বললে, “আর-একটু থাকো ।” " | “কোথায় যােচ্ছ ?” “কিছু জানি নে ৷” এলা অতীনের পা জড়িয়ে ধরে বললে, “আমি তোমার সেবিকা, তোমার চরণের সেবিকা, আমাকে ফেলে যেয়ে না, ফেলে যেয়ো না ।” একটুক্ষণ থমকে দাড়িয়ে রইল অতীন । দ্বিতীয়বার হুইসালের শব্দ এল । অতীন গর্জন করে বললে, "ছেড়ে দাও ।” বলে নিজেকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেল । তখন সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। এলা মেঝের উপর উপুড় হয়ে পড়ে। তার বুকের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে, তার চোখে জল নেই। এমন সময় গভীর গলার ডাক শুনতে পেল, “এলা ।” চমকে উঠে বসল। দেখলে ইলেকট্রিক টর্চ হাতে ইন্দ্রনাথ। তখনই উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “ফিরিয়ে আনুন। অস্তুকে ।” r “সে কথা থােক। এখানে কেন এলে ?” "বিপদ আছে জেনেই এসেছি।” তীব্র ভৎসনার সুরে ইন্দ্রনাথ বললেন, “তোমার বিপদের কথা কে ভাবছে ? এখানকার খবর তোমাকে কে দিলে ?” "ן তবু বুঝলে না মতলব ?” "বোঝবার বুদ্ধি আমার ছিল না। প্রাণ হাঁপিয়ে উঠেছিল।” ”তোমাকে মারতে পারলে এখনই মারাতুম। যাও ঘরে ফিরে । ট্যাকসি আছে বাইরে ।” १||३१