পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার অধ্যায় 8S ( কলা জলে, তারই কিনারায় এসে বসেছি। আজ বলা যাক যত-সব হালকা কথা হাসতে হাসতে । সেই জন্মদিনের ইতিবৃত্তটা শেষ করে দিই। কী বল, এলী ?” “অস্তু, মন দিতে পারছি নে ৷” “আমাদের দুজনের জীবনে মন দেবার যোগ্য যা-কিছু আছে সে কেবল ঐরকম গোটাকয়েক হালকা দিনের মধ্যে। ভোলবার যোগ্য ভারী ভারী দিনই তো বহু বিস্তর।” “আচ্ছা, বলে অস্তু ” “জন্মদিনের খাওয়া হয়ে গেল। হঠাৎ নীরদের শখ হল পলাশির যুদ্ধ আবৃত্তি করবে। উঠে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে গিরিশ ঘোষের ভঙ্গিতে আউড়িয়ে গেল কোথা যাও, ফিরে চাও সহস্র কিরণ, বারেক ফিরিয়া চাও ওগো দিনমণি | নীরদ লোক ভালো, অত্যন্ত সাদাসিধে, কিন্তু নির্দয় তার স্মরণশক্তি | সভাটা ভেঙে ফেলবার জন্যে আমার মন যখন হন্যে হয়ে উঠেছে তখন ওরা ভবেশকে গান গাইতে অনুরোধ করলে। ভবেশ বললে হার্মেনিয়ম সঙ্গে না থাকলে ও হী করতে পারে না – তোমার ঘরে ঐ পােপটা ছিল না। ফাড় কাটল । আশান্বিত মনে ভাবছি। এইবার উপসংহার, এমন সময় সন্তু খামক তর্ক তুললে, মানুষ জন্মায় জন্মদিনে না জন্মতিথিতে ? যত বলি থামো, সে থামে না। তর্কের মধ্যে দেশাত্মবোধের বঁাজ লাগল, চড়তে লািগল গলার আওয়াজ, বন্ধুবিচ্ছেদ হয়। আর কি। বিষম রাগ হল তোমার উপরে। আমার জন্মদিনকে একটা সামান্য উপলক্ষ করেছিলে, মহত্তর লক্ষ্য ছিল কর্মভাইদের একত্র করা ।” “কোনটা লক্ষ্য কোনটা উপলক্ষ বাইরে থেকে বিচার কোরো না অস্তু। শাস্তির যোগ্য আমি, কিন্তু অনায় শাস্তির না। মনে নেই তোমার, সেইবারকার জন্মদিনেই অতীন্দ্রবাবু আমার মুখে নাম নিলেন অন্তু ? সেটা তো খুব ছোটাে কথা নয়। তোমার অন্তু নামের ইতিহাসটা বলো শুনি ।” “সখী, তবে শ্রবণ করে । তখন বয়স আমার চার পাঁচ বছর, মাথায় ছিলুম ছোটাে, কথা ছিল না। মুখে, শুনেছি বোকার মতো ছিল চোখের চাহনি। জ্যোঠামশায় পশ্চিম থেকে এসে আমাকে প্রথম দেখলেন। কোলে তুলে নিলেন, বললেন, এই বালখিলােটার নাম অতীন্দ্র রেখেছে কে ? অতিশয়ৌক্তি অলংকার, এর নাম দাও অন্যতীন্দ্র। সেই অনতি শব্দটা মেহের কণ্ঠে অস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তোমার কাছেও একদিন অতি হয়েছে অনতি, ইচ্ছে করে খুইয়েছে মান ।” হঠাৎ অতীন চমকে উঠে থেমে গেল। বললে, “পায়ের শব্দ শুনছি যেন ।” এলা বললে, “অখিল ।” जा७शाछ (qल, "प्रिंभिीि ।” ছাদে আসবার দরজা খুলে দিয়ে এল জিজ্ঞাসা করলে, “কী।” অখিল বললে, “খাবার ।” বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা নেই। অদূরবতী দিশি রেস্টার থেকে বরাদ্দমত খাবার দিয়ে যায়। এলা বললে, “অন্তু, চলো খেতে ।” "খাওয়ার কথাবোলো না। না খেয়ে মরতে মানুষের অনেকদিন লাগে। নইলে ভারতবর্ষটিকত নী | ভাই অখিল, আর রাগ রেখে না মনে । আমার ভাগটা তুমিই খেয়ে নাও। তার পরে পলায়নেন সমাপয়েৎ- দৌড় দিয়ে যত পাের।” অখিল চলে গেল । দুজনে ছাদের মেঝের উপর বসল। অতীন আবার শুরু করলে। “সেদিনকার জন্মদিন চলতে লীগল একটানা, কেউ নড়বার নাম করে না। আমি ঘন ঘন ঘড়ি দেখছি, ওটা একটা ইঙ্গিত গীতকােনাদের কাছে। শেষকালে তোমাকে বললুম, সকাল সকাল তোমার শুতে যাওয়া উচিত, এই সেদিন ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে উঠেছ।— প্রশ্ন উঠল, “কটা বেজেছে ? উত্তর ‘সাড়ে দশটা।” সভা ভাঙবার দুটাে-একটা হাইতোলা গড়িমসি-করা লক্ষণ দেখা গেল। বঁটু বললে, বসে রইলেন যে