পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8 as রেশম-পশম আসন-বসন কাষ্ঠ-লোষ্ট্র স্বর্ণ-রৌপ্য লইয়া কে বিরোধ করিবে ? তাহারা আমার কে ? তাহারা আমাকে কী দিতে পারে ? তাহারা আমার পরমসম্পৎকে অন্তরাল করিতেছে, তাহাতে দিবারাত্রির মধ্যে লেশমাত্র ক্ষোভ অনুভব করিতেছি না, কেবল তাঁহাদের পুঞ্জীকৃত সঞ্চয়ে গর্ববোধ করিতেছি । হস্তি-অশ্ব-কািচ-প্রস্তরেরই গীেরব, আত্মার গীেরব নাই, শূন্য হৃদয়ে হৃদয়েশ্বরের স্থান নাই। সর্বাপেক্ষা হীনতম দীনতা যে পরমার্থহীনতা, তাহার দ্বারা সমস্ত অন্তঃকরণ রিক্ত শ্ৰীহীন মলিন, কেবল বসনে-ভুষণে উপকরণে আয়োজনে আমি স্ফীত । জগদীশ্বরের কাজ করিতে পারি না ; কেননা শয্যা-আসন বেশভূষার কাছে দাসখত লিখিয়া দিয়াছি, জড়-উপকরণ জঞ্জালের কাছে মাথা বিকাইয়া দিবার সামর্থ্য নাই, কারণ খট্টাপৰ্যন্ধ-অশ্বরথে আমার সমস্ত দান নিঃশেষিত । সমস্ত মঙ্গলকর্ম পড়িয়া আমার সমস্ত চেষ্টার অবসান। শতছিদ্র কলসের মধ্যে জলসিঞ্চয় করিবার জন্য জীবনের শেষমূহুৰ্ত পর্যন্ত ব্যাপৃত রহিয়াছি, অবারিত অমৃতপারাবার সম্মুখে স্তব্ধ হইয়া রহিয়াছে ; যিনি সকল সত্যের সত্য, অন্তরে-বাহিরে জ্ঞানে-ধর্মে কোথাও তাঁহাকে দেখি না— এতবড়ো অন্ধতা লইয়া আমি পরিতৃপ্ত। যিনি আনন্দরূপমমৃতম, যে আনন্দের কণামাত্র আনন্দে সমস্ত জীবজন্তুর প্রাণের চেষ্টা, মনের চেষ্টা, প্রীতির কেবল উপকরণ-সামগ্ৰীতে— এমন বৃহৎ জড়ত্বে আমি পরিবৃত ; র্যাহার অদৃশ্য অঙ্গুলিনির্দেশে । জীবপ্রকৃতি অজ্ঞাত অকীর্তিত সহস্ৰ সহস্ৰ বৎসরের মধ্য দিয়া স্বার্থ হইতে পরমার্থে, স্বেচ্ছাচার হইতে সংযমে, এককত হইতে সমাজতন্ত্রে উপনীত হইয়াছে, যিনি মহন্দভয়ং বাজমুদ্যতম, যিনি দগ্ধোন্ধন ইবানলঃ, সৰ্বকালে সর্বলোকে যিনি আমার ঈশ্বর, তাহার আদেশবাক্য আমার কর্ণগোচর হয় না, তাহার কমে আমার কোনো আস্থা নাই, কেবল জীবনের কয়েকদিনমাত্র যে-কয়েকটি লোককে পাচজন বলিয়া জানি, তাহদেরই ভয়ে এবং তােহাঁদেরই চাটুবাক্যে চালিত হওয়াই আমার দূর্লভ মানবজন্মের একমাত্র লক্ষ্য- এমন মহামূঢ়তার দ্বারা আমি সমাচ্ছন্ন | আমি জানি না। আমি দেখিতে পাই না ; বৃক্ষ ইব স্তক্কো দিবি তিষ্ঠত্যেকস্তেনেদং পূর্ণং পুরুষেণ সর্বম | আমার কাছে সমস্ত জগৎ ছিন্নবিচ্ছিন্ন, সমস্ত বিজ্ঞান খণ্ডবিখণ্ড, সমস্ত জীবনের লক্ষ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সহস্র অংশে বিভক্ত বিদীর্ণ । হে অনন্ত বিশ্বসংসারের পরম এক পরমাত্মন, তুমি আমার সমস্ত চিত্তকে গ্রহণ করো। তুমি সমস্ত জগতের সঙ্গে সঙ্গে আমাকেও পূর্ণ করিয়া স্তব্ধ হইয়া রহিয়াছ, তোমার সেই পূর্ণতা আমি আমার দেহে-মনে, অন্তরে-বাহিরে, জ্ঞানে-কৰ্মে-ভাবে যেন প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করিতে পারি । আমি আপনাকে সর্বতোভাবে তোমার দ্বারা আবৃত রাখিয়া নীরবে নিরভিমানে তোমার কর্ম করিতে চাই । অহরহ তুমি আদেশ করো, তুমি আহবান করো, তোমার প্রসন্নদৃষ্টিদ্বারা আমাকে আনন্দ দাও, তোমার দক্ষিণবাহু দ্বারা আমাকে বল দান করে । অবসাদের দুর্দিন যখন আসিবে, বন্ধুরা যখন নিরস্ত হইবে, লোকেরা যখন লাঞ্ছনা করিবে, আনুকলা যখন দুর্লভ হইবে, दुभि আমাকে পরাস্ত-ভুলুষ্ঠিত ठूठैtङ tिशा •ा ; আমাকে সহস্রের মুখাপেক্ষী করিয়ো না ; আমাকে সহস্রের ভয়ে ভীত, সহস্রের বাকো বিচলিত, সহস্রের আকর্ষণে বিক্ষিপ্ত হইতে যেন না হয় | একতুমি আমার চিত্তের একাসনে অধীশ্বর হও, আমার সমস্ত কর্মকে একাকী অধিকার করো, আমার সমস্ত অভিমানকে দমন করিয়া আমার সমস্ত প্রবৃত্তিকে তোমার পদপ্রান্তে একত্রে সংযত করিয়া রাখো । হে অক্ষরপুরুষ, পুরাতন ভারতবর্ষে তোমা হইতে যখন পুরাণী প্রজ্ঞা প্রসূত হইয়াছিল, তখন আমাদের সরলহাদয় পিতামহগণ ব্ৰহ্মের অভয়, ব্রহ্মের আনন্দ যে কী, তাহা জানিয়াছিলেন । তাহারা একের বলে বলী, একের তেজে তেজস্বী, একের গৌরবে মহীয়ান হইয়াছিলেন । পতিত ভারতবর্ষের জন্য পুনর্বার সেই প্রজ্ঞালোকিত নির্মল নিৰ্ভয় জ্যোতির্ময়। দিন তোমার নিকটে প্রার্থনা করি । পৃথিবীতলে আর-একবার আমাদিগকে তোমার সিংহাসনের দিকে মাথা তুলিয়া দাড়াইতে দাও । আমরা কেবল যুদ্ধবিগ্রহ-যন্ত্রতন্ত্র-বাণিজ্যব্যবসায়ের দ্বারা নহে, আমরা সুকঠিন সুনির্মল সন্তোষবলিষ্ঠ ব্ৰহ্মচর্যের দ্বারা মহিমান্বিত হইয়া উঠিতে চাহি । আমরা রাজত্ব চাই না,