পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম 8br○ নায় বিলীন হইয়া যায়- যদি জানি, k আনন্দাদ্ধোব খন্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে । আনন্দেন জাতানি জীবন্তি আনন্দং প্রয়ন্ত্যভিসংবিশন্তি । マエー আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কদাচন। নিজের মধ্যে ও নিজের বাহিরে সেই ব্রহ্মের আনন্দ জানিয়া কোনো অবস্থাতেই আর ভয় পাওয়া যায় না | স্বার্থের জড়তা এবং পাপের আবর্ত ব্ৰহ্মের এই নিত্যবিরাজমান আনন্দের অনুভূতি হইতে আমাদিগকে বঞ্চিত করে। তখন সহস্র রাজা আমাদের নিকট হইতে কর গ্রহণে উদ্যত হয়, সহস্ৰ প্ৰভু আমাদিগকে সহস্র কাজে চারি দিকে ঘূর্ণ্যমান করে। তখন যাহা-কিছু আমাদের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হয় তাহাই বড়ো হইয়া উঠে— তখন সকল বিরহই ব্যাকুল, সকল বিপদই বিভ্রান্ত করিয়া তোলে— সকলকেই চূড়ান্ত বলিয়া ভ্ৰম হয়। লোভের বিষয় সম্মুখে উপস্থিত হইলেই মনে হয় তাহাকে না পাইলে নয়, বাসনার বিষয় উপস্থিত হইলেই মনে হয়। ইহাকে পাইলেই আমার চরম সার্থকতা। ক্ষুদ্রতার এই সকল অবিশ্রাম ক্ষোভে ভূমি আমাদের নিকটে অগোচর হইয়া থাকেন, এবং প্রত্যেক ক্ষুদ্র ঘটনা আমাদিগকে প্রতিপদে অপমানিত করিয়া যায়। সেইজন্যই আমাদের প্রতিদিনের প্রার্থনা এই যে, আসতো মা সদগময় তমসো মা জ্যোতিৰ্গময় মৃতোর্মামৃতং গময়। আমাকে অসত্য হইতে সত্যে লইয়া যাও ; প্রতি নিমেষের খণ্ডত হইতে তোমার অনন্ত পরিপূর্ণতার মধ্যে আমাকে উপনীত করো ; অন্ধকার হইতে আমাকে জ্যোতিতে লইয়া যাও— অহংকারের যে অন্তরাল, বিশ্বজগৎ আমার সম্মুখে যে স্বাতন্ত্র্য লইয়া দাঁড়ায়, আমাকে এবং জগৎকে তোমার ভিতর দিয়া না দেখিবার যে অন্ধকার তাহা হইতে আমাকে মুক্ত করো ; মৃত্যু হইতে আমাকে অমৃতে লইয়া যাও— আমার প্রবৃত্তি আমাকে মৃত্যুদোলায় চড়াইয়া দোল দিতেছে, মুহুর্তকাল অবসর দিতেছে না ; আমার মধ্যে আমার ইচ্ছগুলাকে খর্ব করিয়া আমার মধ্যে তোমার আনন্দকে প্রকাশমান করো, সেই আনন্দই অমৃতলোক । আজিকার নববর্ষদিনে ইহাই আমাদের বিশেষ প্রার্থনা | সত্য, আলোক ও অমৃতের জন্য আমরা করপুট করিয়া দাড়াইয়াছি। বলিতেছি— আবিরাবীমা এধি | হে স্বপ্রকাশ, তুমি আমাদের নিকটে প্রকাশিত হও । অন্তরে বাহিরে তুমি উদ্ভাসিত হইলেই, প্রবৃত্তির দাসত্ব, জগতের দৌরাত্ম্য কোথায় চলিয়া যায়— তখন তোমার মধ্যে সমস্ত দেশকালের একটি অনবচ্ছিন্ন সামঞ্জস্য একটি পরিপূর্ণ সমাপ্তি দেখিয়া সুগভীর শান্তির মধ্যে আমরা নিমগ্ন ও নিস্তব্ধ হইয়া যাই । তখন যে চেষ্টহীন বলে সমস্ত জগৎ সহজে বিধৃত তাহা আমাদের হৃদয়ে অবতীর্ণ হয়, যে চেষ্টহীন সৌন্দর্যে নিখিল ভুবন পরস্পর গ্রথিত তাহা আমাদের জীবনে আবির্ভূত হয়। তখন আমি যে তােমাকে আত্মসমৰ্পণ করিতেছি এ কথা মনে থাকে না— তোমার সমস্ত জগতের একসঙ্গে তুমিই আমাকে লইতেছ। এই কথাই আমার মনে হয়। সেই স্বপ্রকাশ যতদিন না। আমাদের নিকটে আপনাকে প্রকাশ করবেন ততদিন যেন নিজের ভিতর হইতে র্তাহার দিকে বাহির হইবার একটা দ্বার উন্মুক্ত থাকে। সেই পথ দিয়া প্রত্যহ প্ৰভাতে র্তাহার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করিয়া আসিতে পারি। আমাদের জীবনে একটা দিনের সহিত আর-একটা দিনের যে বন্ধন সে যেন শুধু স্বার্থের বন্ধন না হয়, জড় অভ্যাস-সূত্রের বন্ধন না হয়- একটা বৎসরের সহিত আর-একটা বৎসরকে যেন প্রাত্যহিক নিবেদনের দ্বারা তারই সম্বন্ধে আবদ্ধ করিয়া সম্পূর্ণ করিয়া তুলিতে পারি। এমন কোনাে সূত্ৰে যেন মানবজীবনের দুর্লভ মুহুর্তগুলিকে না বাঁধিতে থাকি যাহা মৃত্যুর স্পর্শমাত্রে বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। জীবনের যে বৎসরটা গেছে তাহা পূজার পদ্মের ন্যায় তাহাকে উৎসর্গ করিতে পারি নাই— তাহার তিন শত পয়ষট্টি দল দিনে দিনে ছিন্ন করিয়া লইয়া