পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতকা তেমনি আমার বঁাশের বাশি আপনাভোলা, চার দিকে মোর চাপা দেয়াল, ওই বাশিটি আমার জানলা খোলা । ওইখানেতেই গুটিকয়েক তান ওই মেয়েটির সঙ্গে আমার ঘুচিয়ে দিত অসীম ব্যবধান । এ সংসারে অচেনাদের ছায়ার মতন আনাগোনা যে-কথাটা কান্না হয়ে বোবার মতন ঘুরে বেড়ায় বুকে উঠল। ফুটে বাঁশির মুখে । বঁশির ধারেই একটু আলো, একটুখানি হাওয়া, যে-পাওয়াটি যায় না দেখা স্পৰ্শ-অতীত একটুকু সেই পাওয়া । আসল বয়স ছিল আট, পড়ার ঘরে বসে বসে ভুলে যেতেম। পাঠ । জানলা দিয়ে দেখা যেত মুখুজ্যেদের বাড়ির পাশে একটুখানি পোড়ো জমি, শুকনো শীর্ণ ঘাসে দেখায় যেন উপবাসীর মতো ! পাড়ার আবর্জনা যত ওইখানেতেই উঠছে জমে, একধরেতে ক্রমে পাহাড়-সমান উচু হল প্রতিবেশীর রান্নাঘরের ছাই ; গোটকয়েক আকন্দগাছ, আর-কোনো গাছ নাই ; দশ-বারোটা শালিখপাখি তুমুল ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে করত ডাকাডাকি ; দুপুরবেলায় ভাঙা গলায় কাকের দলে কী যে প্রশ্ন হাকত শূন্যে কিসের কৌতুহলে । পাড়ার মধ্যে ওই জমিটাই কোনো কাজের নয় ; সবার যাতে নাই প্রয়োজন লক্ষ্মীছাড়ার তাই ছিল সঞ্চয় ; তেলের ভাঙা ক্যানেস্তারা, টুকরো হাঁড়ির কানা, অনেক কালের জীর্ণ বেতের কেদারা একখানা ফুটাে এনামেলের গেলাস, থিয়েটারের ছেড়া বিজ্ঞাপন মরচে-পড়া টিনের লণ্ঠন, সিগারেটের শূন্য বাকস, খোলা চিঠির খাম, অ-দরকারের মুক্তি হেথায়, অনাদরের অমর স্বৰ্গধাম । তখন আমার বয়স ছিল আট, করতে হত ভুবৃত্তান্ত পাঠ । পড়ার ঘরের দেয়ালে চার পাশে ম্যাপগুলো এই পৃথিবীকে ব্যঙ্গ করত নীরব পরিহাসে ; 8 S