পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏊᏔS ኴ রবীন্দ্র-রচনাবলী একটি বৃহৎ অবকাশ রচনা করে সেই অবকাশটিকে পূর্ণ করে দিক। দেখো, একবার ভিতরের দিকে চেয়ে দেখে- অন্তরের সংকোচনগুলি তার নামের আঘাতে প্রতিদিন প্রসারিত হয়ে আসছে, সমস্ত প্ৰসন্ন হচ্ছে, শান্ত হচ্ছে, কর্ম সহজ হচ্ছে, সকলের সঙ্গে সম্বন্ধ সত্য ও সরল হচ্ছে, এবং ঈশ্বরের মহিমা এই মানবজীবনের মধ্যে ধন্য হয়ে উঠছে। ९१ ऊथश* S७$(? ত্যাগের ফল কিন্তু ত্যাগ কেন করব এ প্রশ্নটার চরম উত্তরটি এখনো মনের মধ্যে এসে পৌঁছোল না । শাস্ত্ৰে উত্তর দেয়, ত্যাগ না করলে স্বাধীন হওয়া যায় না, যেটিকে ত্যাগ না করব সেইটিই আমাদের বদ্ধ করে রাখবে- ত্যাগের দ্বারা আমরা মুক্ত হব। মুক্তিলাভ করব, এ কথাটার জোর যে আমাদের কাছে নেই। আমরা তো মুক্তি চাচ্ছি নে ; আমাদের ভিতরে যে অধীনতার একটা বিষম ঝোক আছে- আমরা যে ইচ্ছা করে খুশি হয়ে সংসারের অধীন হয়েছি— আমরা ঘটিবাটি থালার অধীন, আমরা ভূত্যেরও অধীন, আমরা কথার অধীন, প্রথার অধীন, অসংখ্য প্রবৃত্তির অধীন— এতবড়ো জন্ম-অধীন দাসানুদাসকে এ কথা বলাই মিথ্যা যে, মুক্তিতে তোমার সার্থকতা আছে ; যে ব্যক্তি স্বভাবত এবং স্বেচ্ছাক্রমেই বদ্ধ তাকে মুক্তির প্রলোভন দেখানো মিথ্যা । বস্তুত মুক্তি তার কাছে শূন্যতা, নির্বাণ, মরুভূমি। যে মুক্তির মধ্যে তার ঘর-দুয়ার ঘটিবাটি টাকাকড়ি কিছুই নেই, যা কিছুকে সে একমাত্র আশ্রয় বলে জানত তার সমস্তই বিলুপ্ত— সে মুক্তি তার কাছে বিভীষিকা, বিনাশ । আমরা যে ত্যাগ করব তা যদি শূন্যতার মধ্যেই ত্যাগ হয় তবে সে তো একেবারেই লোকসান। একটি কানাকড়িকেও সেইরকম শূন্যের মধ্যে বিসর্জন দেওয়া আমাদের পক্ষে একেবারে অসহ্য । কিন্তু ত্যাগ তো শূন্যের মধ্যে নয়। যদ যদ কর্ম প্রকুবীত তদব্ৰহ্মণি সমৰ্পয়েৎ— যা কিছু করবে সমস্তই ব্রহ্মে সমর্পণ করবে। তোমার সংসারকে তোমার প্রিয়জনকে তোমার সমস্ত কিছুকেই তাকে নিবেদন করে দাও— এই যে ত্যাগ এ যে পরিপূর্ণতার মধ্যে বিসর্জন | পূর্ণের মধ্যে যাকে ত্যাগ করি তাকেই সত্যরূপে পূর্ণরূপে লাভ করি এ কথা পূর্বেই বলেছি। কিন্তু এতেও কথা শেষ হয় না । কেবলমাত্র লাভের কথায় কোনো কথার সমাপ্তি হতে পারে না- লাভ করে কী হবে এ প্রশ্ন থেকে যায়। স্বাধীন হয়েই বা কী হবে, পূর্ণতা লাভ করেই বা কী হবে ? যখন কোনো ছেলেকে পয়সা দিই। সে জিজ্ঞাসা করতে পারে পয়সা নিয়ে কী হবে ? উত্তর যদি দিই বাজারে যাবে, তা হলেও প্রশ্ন এই যে বাজারে গিয়ে কী হবে ? পুতুল কিনবে । পুতুল কিনে কী হবে ? খেলা করবে। খেলা করে কী হবে ? তখন একটি উত্তরে সব প্রশ্নের শেষ হয়ে যায়— খুশি হবে। খুশি হয়ে কী হবে এ প্রশ্ন কেউ কখনো অন্তরের থেকে বলে না। ইচ্ছার পূর্ণ চরিতার্থতা হয়ে যে আনন্দ ঘটে। সেই আনন্দের মধ্যেই সকল প্রশ্ন সকল সন্ধান নিঃশেষিত হয়ে যায় । কেমন করে সংগ্ৰহ করব যার দ্বারা ত্যাগের শক্তি জন্মাবে ? আমাদের এই প্ৰতিদিনের উপাসনার মধ্যে আমরা কিছু কিছু সংগ্ৰহ করছি। এই প্ৰাতঃকালে সেই চৈতন্যস্বরূপের সঙ্গে নিজের চৈতন্যকে নিবিড়ভাবে পরিবেষ্টিত করে দেখবার জন্যে আমাকে যে ক্ষণকালের জন্যেও সমস্ত আবরণ ত্যাগ করতে হচ্ছে, অনাবৃত হয়ে সদ্যোজাত শিশুর মতো তার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হচ্ছে, এতেই আমার দিনে দিনে কিছু কিছু করে জমে উঠবে। আনন্দের সঙ্গে আনন্দ, প্রেমের সঙ্গে প্রেমের মিলন নিশ্চয় ক্রমশই কিছু না কিছু সহজ হয়ে আসছে। কেমন করে ত্যাগ করব ? সংসারের মাঝখানে থেকে অন্তত একটা মঙ্গলের যজ্ঞ আরম্ভ করে