পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ じひ রবীন্দ্র-রচনাবলী সেই গতির কেন্দ্র দূরে নয়— এই যে এইখানেই । তার পরে যিনি আমাদের পরম সম্পৎ, আমাদের পরম আশ্রয়, আমাদের পরম আনন্দ- তিনি আমাদের প্রতিদিনের সমস্ত সম্পদ, প্রতিদিনের সমস্ত আশ্রয় এবং প্রতিদিনের সমস্ত আনন্দের মধ্যেই রয়েছেন । আমাদের ধনজন, আমাদের ঘরদুয়ার, আমাদের সমস্ত রসভোগের মধ্যেই যিনি পরামরূপে রয়েছেন তিনি যে এষঃ তিনি যে ইনি- এই যে এইখানেই । আশ্রয়ে সেই পরম আশ্রয়কে, আমার সমস্ত আনন্দেই সেই পরম আনন্দকে এষঃ বলে জানবএকেই বলে পার হওয়া । ১২. পৌষ ᏔᏬ দিন প্ৰতিদিনই আলোক এবং অন্ধকার, নিদ্রা এবং জাগরণ, সংকোচন এবং প্রসারণের মধ্যে দিয়ে আমাদের জীবন চলেছে— একবার তার জোয়ার একবার তার ভাটা। রাত্রে নিদ্রার সময় আমাদের সমস্ত ইন্দ্ৰিয়-মনের শক্তি আমাদের নিজের মধ্যেই সংহৃত হয়ে আসে । সকালবেলায় সমস্ত জগতের দিকে ধাবিত হয় । শক্তি যখন কেবল আমাদের নিজের মধ্যে সমাহৃত হয়। সেই সময়েই কি আমরা নিজেকে বেশি করে জানি, বেশি করে পাই ? আর সকালে যখন আমাদের শক্তি অন্যের দিকে নানা পথে বিকীর্ণ হতে থাকে তখনই কি আমরা নিজেকে হারাই ? ঠিক তার উলটাে । কেবল নিজের মধ্যে যখন আমরা আসি তখন আমরা অচেতন, যখন সকলের দিকে যাই তখন আমরা জাগ্রত, তখনই আমরা নিজেকে জানি । যখন আমরা একা তখন আমরা কেউ नई । আমাদের যথার্থ তাৎপৰ্য আমাদের নিজেদের মধ্যে নেই, তা জগতের সমস্তের মধ্যে ছড়িয়ে সমস্তের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছি। নইলে যে নিজেকে পাই নে ? আত্মাকে সর্বত্র উপলব্ধি করব। এই হচ্ছে আত্মার একমাত্র আকাঙক্ষণ । আপেল ফলের পতন-শক্তিকে যখন জ্ঞানী বিশ্বের সকল বস্তুর মধ্যেই দর্শন করলেন তখন তার বুদ্ধি অত্যন্ত পরিতৃপ্ত হল! কারণ, সত্যকে সর্বত্র দেখলেই তার সত্যমূর্তি প্রকাশ পায় এবং সেই মূর্তিই আমাদের আনন্দ দান করে । তেমনি আমরা আমাদের নিজেকে সর্বত্র ব্যাপ্ত দেখব। এই হলেই নিজেকে সত্যরূপে দেখা হয় | নিজের এই সত্যকে যতই ব্যাপক করে জানিব ততই আমাদের আনন্দ হবে । যে কেউ আমাদের আপনাকে তার নিজের ভিতর থেকে বাইরের দিকে টেনে নিয়ে তাকে আমাদের কাছে সত্যতাররূপে এই কারণেই মানবাত্মা বহু প্রাচীন যুগ হতে গৃহ বল, সমাজ বল, রাজ্য বল, যা কিছু সৃষ্টি করছে তার ভিতরকার একটি মাত্র মূল তাৎপর্য এই যে, মানুষ একাকিতু পরিহার করে বহুর মধ্যে বিচিত্রের মধ্যে আপনার নানা শক্তিকে নানা সম্বন্ধে বিস্তৃত করে দিয়ে নিজেকে বৃহৎক্ষেত্রে উপলব্ধি করবে