পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(፩ “ነ 8 রবীন্দ্র রচনাবলী উপরে স্থাপিত তা আমরা বুঝতে পারি। যখন তা সম্পূর্ণ বুঝি তখনই যিনি অদ্বৈতম। সেই ঐক্যক্সপী পরমাত্মার সঙ্গে সর্বপ্রকার বাধাহীন প্রেমের মিলন সম্ভবপর হয় । আরম্ভে সত্যের পরিচয়, মধ্যে মঙ্গলের পরিচয়, পরিণামে আনন্দের পরিচয় | প্রথমে জ্ঞান, পরে কর্ম, পরে প্ৰেম । এইজন্যে যেমন আমাদের ধ্যানের মন্ত্র “শাস্তম শিবম অদ্বৈতম— তেমনি আমাদের প্রার্থনার মg “আসতো মা সদগময়, তমসো মা জ্যোতিৰ্গময়, মৃত্যোৰ্মামৃতং গময় ।” অসত্য হতে সত্যে, পাপ হতে পুণ্যে এবং আসক্তি হতে প্রেমে নিয়ে যাও ! তবেই হে প্রকাশ, তুমি আমার প্রকাশ হবে, তবেই হে রুদ্র, আমার জীবনে তুমি প্রসন্ন হয়ে উঠবে। সত্যে শেষ নয়, মঙ্গলে শেষ নয়, অদ্বৈতেই শেষ । জগৎপ্রকৃতিতে শেষ নয়, সমাজপ্রকৃতিতে৫ শেষ নয়, পরমাত্মাতেই শেষ, এই হচ্ছে আমাদের ভারতবর্ষের বাণী— এই বাণীটিকে জীবনে যেন সার্থক করতে পারি। এই আমাদের প্রার্থনা হোক । ১১ পেীয় পার্থক্য ঈশ্বর যে কেবল মানুষকেই পার্থক্য দান করেছেন আর প্রকৃতির সঙ্গে মিলে এক হয়ে রয়েছেন, একথা বললে চলবে কেন ? প্রকৃতির সঙ্গেও তার একটি স্বাতন্ত্রা আছে। নইলে প্রকৃতির উপরে তার তো কোনো ক্রিয়া চলত না । তফাত এই যে, মানুষ জানে সে স্বতন্ত্র-— শুধু তাই নয়, সে এও জানে যে ঐ স্বাতন্ত্রে তার অপমান নয়, তার গৌরব । বাপ যখন বয়ঃপ্রাপ্ত ছেলেকে নিজের তহবিল থেকে একটি স্বতন্ত্র তহবিল করে দেন তখন এই পার্থক্যের দ্বারা তাকে তিরস্কৃত করেন না--- বস্তুত এই পার্থকেই তার একটি বিশেষ স্নেহ প্রকাশ পায় এবং এই পার্থক্যের মহাগীেরবটুকু মানুষ কোনোমতেই ভুলতে পারে না । মানুষ নিজের সেই স্বাতন্ত্ৰ-গৌরবের অধিকারটি নিয়ে নিজে ব্যবহার করছে । প্রকৃতির মধ্যে সেই অহংকার নেই, সে জানে না সে কী পেয়েছে । ঈশ্বর এই প্রকৃতিকে কী দিয়ে পৃথক করে দিয়েছেন । নিয়ম দিয়ে । নিয়ম দিয়ে না। যদি পৃথক করে দিতেন তা হলে প্রকৃতির সঙ্গে তার ইচ্ছার যোগ থাকত না । একাকার হয়ে থাকলে ইচ্ছার গতিবিধির পথ থাকে, না ! যে লোক দাবাবড়ে খেলায় নিজের ইচ্ছাকে প্রয়োগ করতে চায় সে প্রথমে নিজের ইচ্ছাকে বাধা দেয় । কেমন করে ? নিয়ম রচনা করে । প্রত্যেক ঘুটিকে সে নিয়মে বদ্ধ করে দেয় । এই যে নিয়ম, এ বস্তুত যুঁটির মধ্যে নেই।-- যে খেলবে তারই ইচ্ছার মধ্যে ! ইচ্ছা নিজেই নিয়ম স্থাপন করে সেই নিয়মের উপরে নিজেকে প্রয়োগ করতে থাকে। তবেই খেলা সম্ভব হয় । , বিশ্বজগতে ঈশ্বর জলের নিয়ম, স্থলের নিয়ম, বাতাসের নিয়ম, আলোর নিয়ম, মনের নিয়ম, নানা" প্রকার নিয়ম বিস্তার করে দিয়েছেন । এই নিযামকেই আমরা বলি সীমা। এই সীমা, প্রকৃতি কোথাও থেকে মাথায় করে এনেছে, তা তো নয়। তার ইচ্ছাই নিজের মধ্যে এই নিয়মকে এই সীমাকে স্থাপন করেছে- নতুবা, ইচ্ছা বেকার থাকে, কাজ পায় না। এইজন্যেই যিনি অসীম তিনিই সীমার আকর হয়ে উঠেছেন- কেবলমাত্র ইচ্ছার দ্বারা, আনন্দের দ্বারা । সেই কারণেই উপনিষৎ বলেন, প্রকাশ পাচ্ছেন তার যা কিছু রূপ তা আনন্দরূপ- অর্থাৎ মূর্তিমান ইচ্ছা— ইচ্ছা আপনাকে সীমায় বেঁধেছে, রূপে বেঁধেছে । প্রকৃতিতে ঈশ্বর নিয়মের দ্বারা সীমার দ্বারা যে পার্থক সৃষ্টি করে দিয়েছেন সে যদি কেবলমাত্রই