পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন (R፩ S এইজন্যে বড়োর মধ্যে বিশেষের দীেরাত্ম্য কম পড়াতে মানুষ বড়ো ভাবের আনন্দে ছােটাের বন্ধন, টাকার বন্ধন, খ্যাতির বন্ধন ত্যাগ করতে পারে । তাই দেখা যাচ্ছে নির্বিশেষের অভিমুখেই মানুষের সমস্ত উচ্চ আকাঙক্ষা সমস্ত উন্নতির চেষ্টা কাজ করছে । অদ্বৈতবাদ, মায়াবাদ, বৈরাগ্যবাদ মানুষের এই ভাবকে এই সত্যকে সমুজ্জ্বল করে দেখেছে। সুতরাং মানুষকে অদ্বৈতবাদ একটা বৃহৎ সম্পদ দান করেছে। তার মধ্যে নানা অব্যক্ত অর্ধব্যক্ত ভাবে যে-সত্য কাজ করছিল, সমস্ত আবরণ সরিয়ে দিয়ে তারই সম্পূর্ণ পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু যেখানেই হােক, বিশিষ্টতা বলে একটা পদার্থ এসেছে। তাকে মিথ্যাই বলি, মায়াই বলি, তার মস্ত একটা জোর সে আছে | এই জোর সে পায় কোথা থেকে ? ব্ৰহ্ম ছাড়া আর কোনো শক্তি (তাকে শয়তান বলে বা আর কোনো নাম দাও) কি বাইরে থেকে জোর করে এই মায়াকে আরোপ কমে দিয়েছে y সে তো কোনোমতে মনেও করতে পারি। নে । উপনিষদে এই প্রশ্নের উত্তর এই যে, আনন্দাদ্ধোব খন্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে— ব্রহ্মের আনন্দ থেকেই এ সমস্ত যা-কিছু হচ্ছে। এ তার ইচ্ছা।-- তার আনন্দ | বাইরের জোর নয় । এমনি করে বিশেষের পথ পার হয়ে সেই নির্বিশেষে আনন্দের মধ্যে যেমনি পৌছানো যায়, আমনি লাইন ঘুরে আবার বিশেষের দিকে ফিরে আসে। কিন্তু তখন এই-সমস্ত বিশেষকে আনন্দের ভিতর দিয়ে দেখতে পাই– আর সে আমাদের বদ্ধ করতে পারে না । কম তখন আনন্দের কম হয়ে ফলাকাঙক্ষা ত্যাগ করে বেঁচে যায়- সংসার তখন আনন্দময় হয়ে ওঠে । কমই তখন চরম হয় না, সংসারই তখন চরম হয় না, আনন্দই তখন চরম হয় । এমনি করে মুক্তি আমাদের যোগে নিয়ে আসে, বৈরাগা আমাদের প্রেমে উত্তীর্ণ করে দেয় । J] aበዪ፡ দুই স পর্যগাছুক্রমকায়মব্ৰণমস্নাবিরং শুদ্ধমপাপবিদ্ধম | কবিৰ্মনীষী পরিভৃঃ স্বয়ম্বুর্ষাথা তথাতোেহর্থন বাদধাচ্ছাশ্বতীভাঃ সমােভাঃ।। উপনিষদের এই মন্ত্রটিকে আমি অনেকদিন অবজ্ঞা করে এসেছি । নানা কারণেই এই মন্ত্রটিকে খাপছাড়া এবং অদ্ভুত মনে হত । বাল্যকাল থেকে আমরা এই মন্ত্রের অর্থ এইভাবে শুনে আসছি— তিনি সর্বব্যাপী, নির্মল, নিরবয়ব, শিরা ও ব্ৰণ – রহিত, শুদ্ধ অপাপবিদ্ধ। তিনি সর্বদশী, মনের নিয়ন্তা, সকলের শ্রেষ্ঠ ও স্বপ্রকাশ, তিনি সর্বকালে প্ৰজাদিগকে যথোপযুক্ত অর্থসকল বিধান করিতেছেন । ঈশ্বরের নাম এবং স্বরূপের তালিকা নানা স্থানে শুনে শুনে আমাদের অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এখন এগুলি আবৃত্তি করা এত সহজ হয়ে পড়েছে যে, এজন্য আর চিন্তা করতে হয় না— সুতরাং যে শোনে তারও চিন্তা উদ্রেক করে না । বাল্যকালে উল্লিখিত মন্ত্রটিকে আমি চিন্তার দ্বারা গ্ৰহণ করি নি, বরঞ্চ আমার চিন্তার মধ্যে একটি বিদ্রোহ ছিল। প্রথমত এর ব্যাকরণ এবং রচনাপ্রণালীতে ভারি একটা শৈথিল দেখতে পেতুম-তিনি সর্বব্যাপী এই কথাটাকে একটা ক্রিয়াপদের দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে- যথা- স পৰ্যাগাৎ ; তার পরে র্তার অন্য সংজ্ঞাগুলি শুক্ৰম অকায়ম প্রভৃতি বিশেষণ পদের দ্বারা ব্যক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত শুক্রম অকায়ম এগুলি ক্লীবলিঙ্গ, তার পরেই হঠাৎ কবির্মনীষী প্রভৃতি পুংলিঙ্গ বিশেষণের প্রয়োগ হয়েছে। তৃতীয়ত ব্ৰহ্মের শরীর নেই এই পর্যন্তই সহ্য করা যায়, কিন্তু ব্ৰণ নেই, স্নায়ু নেই বললে এক তাে