পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V9Oby রবীন্দ্র-রচনাবলী प्ठों অন্তরকে বাইরের আক্রমণ থেকে বাঁচাও । দুইকে মিশিয়ে এক করে দেখাে না । সমস্তটাকেই কেবলমাত্র সংসারের অন্তর্গত করে জেনো না । তা যদি কর তবে সংসারসংকট থেকে উদ্ধার পাবার কোনো রাস্তা খুঁজে পাবে না । থেকে থেকে ঘোরতর কর্মসংঘাতের মাঝখানেই নিজের অন্তরকে নির্লিপ্ত বলে অনুভব করে । এইরকম ক্ষণে ক্ষণে বারংবার উপলব্ধি করতে হবে । খুব কোলাহলের ভিতরে থেকে একবার চকিতের মতো দেখে নিতে হবে- সেই অস্তরের মধ্যে কোনো কোলাহল পীেচচ্ছে না । সেখানে শান্ত, স্তব্ধ, নির্মল । না, কোনোমতেই সেখানে বাহিরের কোনো চাঞ্চল্যকে প্রবেশ করতে দেব না । এই-যে আনাগোনা, লোকলীেকিকতা, হাসিখেলার মহা জনতা, এর মধ্যে বিদ্যুদবেগে একবার অন্তরের অন্তরে ঘুবে এসো— দেখে এসো সেখানে নিবাতনিষ্কম্প প্রদীপটি জ্বলছে, অনুত্তরঙ্গ সমুদ্র আপনি অতলস্পর্শ গভীরতায় স্থির হয়ে রয়েছে, শোকের ক্ৰন্দন সেখানে পৌঁছয় না, ক্রোধের গর্জন সেখানে শান্ত । এই বিশ্বসংসারে এমন কিছুই নেই, একটি কণাও নেই, যার মধ্যে পরমাত্মা ওতপ্রোত হয়ে না। রয়েছেন, কিন্তু তবু তিনি দ্রষ্টা— কিছুর দ্বারা তিনি অধিকৃত নন । এই জগৎ তারই বটে, তিনি এর সর্বত্রই আছেন বটে, কিন্তু তবু তিনি এর অতীত হয়ে আছেন । আমাদের অন্তরাত্মাকেও সেইরকম করেই জানবে— সংসার তীর, শরীর তীর, বুদ্ধি তীর, হৃদয় তীর । এই সংসারে শরীরে বুদ্ধিতে হৃদয়ে তিনি পরিব্যাপ্ত হয়েই আছেন, কিন্তু তবু আমাদের অন্তরাত্মা এই সংসার শরীর বুদ্ধি ও হৃদয়ের অতীত । তিনি দ্রষ্টা । এই যে-আমি সংসারে জন্মলাভ করে বিশেষ নাম ধরে নানা সুখ দুঃখ ভোগ করছে, এই তার বহিরংশকে তিনি সাক্ষীরূপেই দেখে যাচ্ছেন। আমরা যখন আত্মবিৎ হই, এই অন্তরাত্মাকে যখন সম্পূর্ণ উপলব্ধি করি, তখন আমরা নিজের নিত্য স্বরূপকে নিশ্চয় জেনে সমস্ত সুখ-দুঃখের মধ্যে থেকেও সুখ-দুঃখের অতীত হয়ে যাই, নিজের জীবনকে সংসারকে দ্রষ্টারূপে জানি । এমনি করে সমস্ত কর্ম থেকে, সংসার থেকে, সমস্ত ক্ষোভ থেকে, বিবিত্ত করে আত্মাকে যখন বিশুদ্ধ স্বরূপে জানি তখন দেখতে পাই তা শূন্য নয় ; তখন নিজের অন্তরে সেই নির্মল নিস্তব্ধ পরম ব্যোমকে, সেই চিদাকাশকে দেখি যেখানে— সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্ৰহ্ম নিহিতং গুহায়াম। নিজের মধ্যে সেই আশ্চর্য জ্যোতির্ময় পরামকোষকে জানতে পারি। যেখানে সেই অতি শুভ্ৰ জ্যোতির জ্যোতি বিরাজমান । এইজন্যই উপনিষৎ বারংবার বলেছেন, অন্তরাত্মাকে জানো, তা হলেই অমৃতকে জানবে, তা হলেই পরামকে জানবে। তা হলে সমস্তের মাঝখানে থেকেই, সকলের মধ্যে প্রবেশ করেই, কিছুই পরিত্যাগ না করে মুক্তি পাবে- নানাঃপস্থা বিদ্যাতে আয়নায় । ७ श्काइन्| নিত্যধাম উপনিষৎ বলেছেন আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কদাচন । ব্ৰহ্মের আনন্দ যিনি জেনেছেন তিনি কদাচই ভয় পান না । সেই ব্ৰহ্মের আনন্দকে কোথায় দেখব, তাকে জানিব কোনখানে ? অন্তরাত্মার মধ্যে । আত্মাকে একবার অন্তরনিকেতনে, তার নিত্যানিকেতনে দেখে- যেখানে আত্মা বাহিরের হৰ্ষশোকের অতীত, সংসারের সমস্ত চাঞ্চলের অতীত, সেই নিভৃত অন্তরতম গুহার মধ্যে প্রবেশ করে