পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७७ রবীন্দ্র-রচনাবলী মনের চিন্তাকে স্পর্শ করাতে হবে- আমার সংসারের কর্মকে স্পর্শ করাতে হবে । তা হলে, যা হাল্কা ছিল এক মুহুর্তে তাতে গৌরবসঞ্চার হবে, যা মলিন ছিল তা উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, যার কোনো দাম ছিল না তার মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের সকালবেলাকার এই উপাসনাটিকে ছোয়াব, সমস্তদিন সব-তাতে ছোয়াব।— তার নামকে ছোয়াব, তীর ধ্যানকে ছোয়াব, “শািন্তম শিবম অদ্বৈতম” এই মন্ত্রটিকে ছোয়াব উপাসনাকে কেবল হৃদয়ের ধন করব না- তাকে চরিত্রের সম্বল করব, তার দ্বারা কেবল স্নিগ্ধতা লাভ করব নাপ্রতিষ্ঠালাভ করব । ) লোকে প্রচলিত আছে প্ৰভাতের মেঘ ব্যর্থ হয়, তাতে বৃষ্টি দেয় না। আমাদের এই প্ৰভাতের উপাসনা যেন তেমনি ক্ষণকালের জন্য আবির্ভূত হয়ে সকালবেলাকার হাওয়াতেই উড়ে চলে না या | কেননা, যখন রৌদ্র প্রখর তখনই স্নিগ্ধতার দরকার, যখন তৃষ্ণা প্রবল তখনই বর্ষণ কাজে লাগে । সংসারের ঘোরতর কাজের মাঝখানেই শুষ্কতা আসে, দাহ জন্মায়। ভিড় যখন খুব জমেছে, কোলাহল যখন খুব জেগেছে, তখনই আপনাকে হারিয়ে ফেলি। আমাদের প্রভাতের সঞ্চয়কে সেই সময়েই যদি কোনো কাজে লাগাতে না পারি, সে যদি দেবত্র সম্পত্তির মতো মন্দিরেরই পূজাৰ্চনার কাজে নিযুক্ত থাকে, সংসারের প্রয়োজনে তাকে খাটাবার জো না থাকে- তা হলে কোনো কাজ হল না । দিনের মধ্যে এক-একটা সময় আছে যে সময়টা অত্যন্ত নীরস, অত্যন্ত অনুদার । যে সময়ে ভূম সকলের চেয়ে প্রচ্ছন্ন থাকেন— যে সময়ে, হয় আমরা একান্তই আপিসের জীব হয়ে উঠি, নয়তো আহার-পরিপাকের জড়তায় আমাদের অন্তরাত্মার উজ্জ্বলতা অত্যন্ত স্নান হয়ে আসে- সেই শুষ্কতা ও জড়ত্বের আবেশকালে তুচ্ছতার আক্রমণকে আমরা যেন প্রশ্ৰয় না দিই— আত্মার মহিমাকে তখনো যেন প্রত্যক্ষগোচর করে রাখি। যেন তখনই মনে পড়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি ভুর্ভুবঃস্বলোকে, মনে পড়ে যে অনন্ত চৈতন্যস্বরূপ এই মুহুর্তে আমাদের অন্তরে চৈতন্য বিকীর্ণ করছেন, মনে পড়ে যে সেই শুদ্ধং অপাপবিদ্ধং এই মুহূর্তে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন । সমস্ত হাস্যালাপ, সমস্ত কাজকর্ম, সমস্ত চাঞ্চলের অন্তরতম মূলে যেন একটি অবিচলিত পরিপূর্ণতার উপলব্ধি কখনাে না সম্পূৰ্ণ আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তাই বলে এ কথা যেন কেউ না মনে করেন যে, সংসারের সমস্ত হাসিগল্প সমস্ত আমােদ-আহ্লাদকে একেবারেই বিসর্জন দেওয়াই সাধনা। যার সঙ্গে আমাদের যেটুকু স্বাভাবিক সম্বন্ধ আছে তাকে রক্ষা না করলেই সে আমাদের অস্বাভাবিক রকম করে পেয়ে বসে- ত্যাগ করবার কৃত্রিম চেষ্টাতেই ফাস আরো বেশি করে আঁটি হয়ে ওঠে । স্বভাবত যে জিনিসটা বাইরের ক্ষণিক জিনিস, ত্যাগের চেষ্টায় অনেক সময় সেইটাই আমাদের অন্তরের ধ্যানের সামগ্ৰী হয়ে দাড়ায় । ত্যাগ করব না, রক্ষা করব, কিন্তু ঠিক জায়গায় রক্ষা করব । ছোটােকে বড়ো করে তুলব না, শ্রেয়কে প্রেয়ের আসনে বসতে দেব না এবং সকল সময়ে সকল কমেই অন্তরের গৃঢ় কক্ষের আচল দরবারে উপাসনাকে চলতে দেব। তিনি নেই এমন কথাটাকে কোনাে সময়েই কোনােমতেই মনকে বুঝতে দেব না— কেননা সেটা একেবারেই মিথ্যা কথা । প্ৰভাতে একান্ত ভক্তিতে তীয় চরণের ধূলি মনের ভিতরে তুলে নিয়ে যাও— সেই আমাদের পরশরতন। আমাদের হাসিখেলা আমাদের কাজকর্ম আমাদের বিষয়-আশয় যা-কিছু আছে তার উপর সেই ভক্তি ঠেকিয়ে দাও । আপনিই সমস্ত বড়ো হয়ে উঠবে, সমস্ত পবিত্র হয়ে উঠবে, সমস্তই তার সম্মুখে উৎসর্গ করে দেবার যোগ্য হয়ে দাড়াবে। &२ शब्रून