পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R নিকেতন V\SDy একটি একটি করে একটু একটু করে তার থেকে মরতে হবে। এসে মৃত্যু এসো- এসো অমৃতের দূত st এসো অপ্রিয় বিরসা তিক্ত, এসো গো অশ্রুসলিলসিক্ত, এসো গো ভূষণবিহীন রিক্ত, এসো গো চিত্তপােবন । এসো গো পরম দুঃখনিলয়, আশা অন্ধুর করাহ বিলয় ; এসো সংগ্রাম, এসো মহাজয়, এসো গো মরণ সাধন। ১৯ ফাল্লুন ফল ভিতরের সাধনা যখন আরম্ভ হয়ে গেছে তখন বাইরে তার কতকগুলি লক্ষণ আপনি প্রকাশ হয়ে পড়তে থাকে ; সে লক্ষণগুলি কী রকম তা একটি উপমার সাহায্যে ব্যক্ত করতে চেষ্টা করি । গাছের ফলকে মানুষ বরাবর নিজের সার্থকতার সঙ্গে তুলনা করে এসেছে। বস্তুত, মানুষের লক্ষ্যসিদ্ধি মানুষের চেষ্টার পরিণামের সঙ্গে সাদৃশ্য আছে এমন জিনিস। যদি জগতে কোথাও থাকে তবে সে গাছের ফলে । নিজের কর্মের রূপটিকে নিজের জীবনের পরিণামকে যেন ফলের মধ্যে আমরা চক্ষে প্রত্যক্ষ দেখতে পাই | ফল জিনিসটা সমগ্র গাছের শেষ লক্ষ্য— পরিণত মানুষটি তেমনি সমস্ত সংসারবৃক্ষের শেষলাভ। কিন্তু মানুষের পরিণতি যে আরম্ভ হয়েছে তার লক্ষণ কী ? একটি আমফল যে পাকছে তারই বা व्लभ० दंती ? সব প্ৰথমে দেখা যায়, তার বাইরে একটা প্রান্তে একটু রঙ ধরতে আরম্ভ করেছে, তার শ্যামবর্ণ ঘুচাবে ঘুচিবে করছে— সোনা হয়ে ওঠবার চেষ্টা । আমাদেরও ভিতরে যখন পরিণতি আরম্ভ হয় বাইরে তার দীপ্তি দেখা দেয় । কিন্তু সব জায়গায় সমান নয়, কোথাও কালো কোথাও সোনা । তার সকল কাজ সকল ভাব সমান উজ্জ্বলতা পায় না, কিন্তু এখানে-ওখানে যেন জ্যোতি দেখা দিতে থাকে। নিজের পাতারই সঙ্গে ফলের যে বর্ণসাদৃশ্য ছিল সেটা ক্রমশ ঘুচে আসতে থাকে, চারি দিকে আকাশের আলোর যে রঙ সেই রঙের সঙ্গেই তার মিলন হয়ে আসে । যে গাছে তার জন্ম সেই গাছের সঙ্গে নিজের রঙে পার্থক্য সে আর কিছুতেই সংবরণ করতে পারে না— চারি দিকের নিবিড় শ্যামলতার আচ্ছাদন থেকে সে বাহিরের আকাশে প্রকাশ পেয়ে উঠতে থাকে । তার পরে তার বাহিরটি ক্রমশই কোমল হয়ে আসে । আগে বড়ো শক্ত আঁটি ছিল। কিন্তু এখন আর সে কঠোরতা নেই। দীপ্তিময় সুগন্ধময় কোমলতা। পূর্বে তার যে রস ছিল সে রসে তীব্ৰ অম্লতা ছিল, এখন সমস্ত মাধুর্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ এখন তার বাইরের পদার্থ সমস্ত বাইরেরই হয়, সকলেরই ভোগের হয়, সকলকে আহবান করে, কাউকে ঠেকাতে চায় না। সকলের কাছে সে কোমল সুন্দর হয়ে ওঠে । গভীরতর সার্থকতার অভাবেই মানুষের তীব্ৰতা কঠিনতা এমন উগ্রভাবে প্রকাশ পায়— সেই আনন্দের দৈন্যেই তার দৈন্য, সেইজন্যেই সে বাহিরকে আঘাত করতে উদ্যত হয় ।