পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ეტ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সৃষ্টি এই যে আমরা কয়জন প্ৰাতঃকালে এইখানে উপাসনা করতে বসি- এও একটি সৃষ্টি। এর মাঝখানেও সেই সবিতা আছেন । আমরা বলে থাকি এটা এইরকম হয়ে উঠেছে। আমরা দু-চারজন পরামর্শ করলুম, তার পরে একত্র হয়ে বসলুম, তার পরে রোজ রোজ এইরকম চলে আসছে। ঘটনা এই বটে, কিন্তু সত্য এই নয়। ঘটনার দিক থেকে দেখলে এ একটি সামান্য ব্যাপার, কিন্তু সত্যের দিক থেকে দেখলে এ বড়ো আশ্চৰ্য, প্রতিদিনই আশ্চর্য। সত্য মাঝখানে এসে নানা অপরিচিতকে নানা দিক থেকে টেনে এই একটি উপাসনামণ্ডলী নিরন্তর সৃষ্টি করছেন। আমরা মনে করছি আমরা এখানে খানিকক্ষণের জন্য বসে কাজ সেরে তার পরে অন্য কাজে চলে গেলুম, বাস চুকে গেলা— কিন্তু এ তো ছোটাে ব্যাপার নয়, আমরা যখন পড়ছি, পড়াচ্ছি, খাচ্ছি, বেড়াচ্ছি, তখনাে এই আমাদের মণ্ডলীটির সৃষ্টিকর্তা এরই সৃষ্টিকার্যে রয়েছেন। সেই জনানাং হৃদয়ে সন্নিবিষ্টঃ বিশ্বকর্ম আমাদের মধ্যে কাজ করে চলেছেন, তিনি আমাদের এই কয়জন ভিন্ন ভিন্ন লোকের মনে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এর উপকরণ সাজিয়ে তুলছেন। তার যেন আর অন্য কোনো কােজ নেই, বিশ্বসৃষ্টি তীর যত বড়ো কাজ এও যেন তার তত বড়োই কাজ। আমাদের এই উপাসনালোকটি কেবলই হচ্ছে, হচ্ছে, হয়ে উঠছে— ‘দিনরাত, দিনরাত। আমরা যখন ঘুমোচ্ছি। তখনো হচ্ছে, আমরা যখন ভুলে আছি তখনো হচ্ছে। সত্য যখন আছে, তখন কিছুই হচ্ছে না বা এক মুহূর্তও তার বিরাম আছে। এ কখনাে হতেই १†त ● | বিশ্বভুবনের মাঝখানে একটি সত্যং বিরাজ করছেন বলেই প্রতিদিনই বিশ্বভুবনকে তার যথাস্থানে যথানিয়মে দেখতে পাচ্ছি। আমাদের কয়জনের মাঝখানে একটি সত্যং কাজ করছেন বলেই প্রতিদিন প্ৰাতঃকালে আমরা এখানে এসে বসছি। বিশ্বভুবন সেই এক সত্যকে প্ৰদক্ষিণ করে প্রণাম করছে। যেখানে আমাদের দূরবীন পীেছােয় না, মন পীেছােয় না, সেখানেও কত জ্যোতির্ময় লোক তাকে বেষ্টন করে করে বলছে নমােনমঃ । আমরাও তেমনি করেই আমাদের এই উপাসনালোকের সত্যকে বেষ্টন করে বসেছি, যিনি লোক-লোকান্তরের মাঝখানে বসে আছেন তিনি এই প্রাঙ্গণে বসে আছেন ; কেবল যে আমাদের মধ্যে চৈতন্য বিকীর্ণ করছেন তা নয়, আমাদের কয়জনকে নিয়ে যে বিশেষ সৃষ্টি চলছে তারও শক্তি বিকীর্ণ করছেন, আমাদের কয়েকজনের মনকে এই বিশেষ ব্যাপারে নানারকম করে চালাচ্ছেন, আমাদের কয়জনের প্রকৃতি সংস্কার ও শিক্ষার নানা বৈচিত্ৰ্যকে সেই এক এই মুহূর্তেই একটি ঐক্যের মধ্যে গড়ে তুলছেন এবং আমরা যখন এখান থেকে উঠে অন্যত্র চলে যাব তখনো তিনি তীর এই কাজে বিশ্রাম দেবেন না । আমাদের মাঝখানের সেই সত্যকে, আমাদের উপাসনাজগতের সেই সবিতাকে এইখানে প্ৰত্যক্ষ দর্শন করে যাব, তাকে প্ৰদক্ষিণ করে তাকে একসঙ্গে প্ৰণাম করে যাব । আমরা প্রত্যহ জেনে যাব, সূর্যচন্দ্ৰ গ্ৰহতারা যেমন তীর অনন্ত সৃষ্টি, আমাদের কয়জনকে যে এখানে বসিয়েছেন এও তীর তেমনি সৃষ্টি। তার অবিরাম আনন্দ এই কাজটিতে প্রকাশিত হচ্ছে, সেই প্রকাশককে আমরা দেখে যাব { ○ @ 〉9〉Q