পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন VO স্বভাবকে লাভ আমাদের জীবনের একটিমাত্র সাধনা এই যে, আমাদের আত্মার যা স্বভাব সেই স্বভাবটিকেই যেন বাধামুক্ত করে তুলি । আত্মার স্বভাব। কী । পরমাত্মার যা স্বভাব আত্মারও স্বভাব তাই । পরমাত্মার স্বভাব। কী ? তিনি গ্ৰহণ করেন না, তিনি দান করেন। তিনি সৃষ্টি করেন। সৃষ্টি করার অর্থই হচ্ছে বিসর্জন করা। এই যে তিনি বিসর্জন করেন এর মধ্যে কোনো দায় নেই, কোনো বাধ্যতা নেই। আনন্দের ধর্মই হচ্ছে স্বতই দান করা, স্বতই বিসর্জন করা । আমরাও তা জানি । আমাদের আনন্দ আমাদের প্ৰেম বিনা কারণে আত্মবিসর্জনেই আপনাকে চরিতার্থ लदुल्हे डैरिलता-अनाक्षर क्टिन शव সেই আনন্দময়ের - আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার একটি সাধৰ্ম আছে। আমাদের আত্মাও নিয়ে খুশি নয়, সে দিয়ে খুশি। নেব, কাড়ব, সঞ্চয় করব, এই বেগাই যদি ব্যাধির বিকারের মতো জেগে ওঠে, তা হলে ক্ষোভের ও তাপের সীমা থাকে না । যখন আমরা সমস্ত মন দিয়ে বলি “দেব, তখনই আমাদের আনন্দের দিন । তখনই সমস্ত ক্ষোভ দূর হয়, সমস্ত তাপ শান্ত হয়ে যায়। আত্মার এই আনন্দময় স্বরূপটিকে উপলব্ধি করবার সাধনা করতে হবে । কেমন করে করব ? ঐ যে একটা ক্ষুধিত অহং আছে, যে কাঙািল সব জিনিসই মুঠো করে ধরতে চায়, যে কৃপণ নেবার মতলব ছাড়া কিছু দেয় না, ফলের মতলব ছাড়া কিছু করে না, সেই অহংটাকে বাইরে রাখতে হবেতাকে পরমাত্মীয়ের মতো সমােদর করে অন্তঃপুরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সে বস্তুত আত্মার আত্মীয় নয়, কেননা সে যে মরে আর আত্মা যে অমর | আত্মা যে, ন জায়তে ত্ৰিয়তে, না জন্মায় না মরে । কিন্তু ঐ অহংটা জন্মেছে, তার একটা নামকরণ হয়েছে ; কিছু না পারে তো, অন্তত তার ঐ নামটাকে স্থায়ী করবার জন্যে তার প্রাণপণ যত্ন । এই যে আমার অহং, একে একটা বাইরের লোকের মতো আমি দেখব । যখন তার দুঃখ হবে তখন বলব তার দুঃখ হয়েছে। শুধু দুঃখ কেন, তার ধনজন খ্যাতি-প্রতিপত্তি কিছুতে আমি অংশ নেব না। আমি বলব না যে, এ সমস্ত আমি পাচ্ছি, আমি নিচ্ছি। প্রতিদিনই এই চেষ্টা করব আমার অহং যা-কিছুকে আঁকড়ে ধরতে চায় আমি তাকে যেন গ্ৰহণ না করি। আমি বার বার করে বলব— ও আমার নয়, ও আমার বাইরে । যা বাইরেকার তাকে বাইরে রাখতে প্ৰাণ সরে না বলে আবর্জনায় ভরে উঠলুম, বোঝায় চলা দায় হল। সেই মৃত্যুময় উপকরণের বিকারে প্রতিদিনই আমি মরছি। এই মরণধমী অহংটাকেই আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে তার শোকে, তার দুঃখে, তার ভারে ক্লান্ত হচ্ছি। অহং-এর স্বভাব হচ্ছে নিজের দিকে টানা, আর আত্মার স্বভাব হচ্ছে বাইরের দিকে দেওয়াএইজন্যে এই দুটােতে জড়িয়ে গেলে ভারি একটা পাকের সৃষ্টি হয়। একটা বেগ প্রবাহিত হয়ে যেতে চায়, আর-একটা বেগ কেবলই ভিতরের দিকে আকর্ষণ করতে থাকে ; ভারি একটা সংকট ঘনিয়ে ওঠে। আত্মা তার স্বভাবের বিরুদ্ধে আকৃষ্ট হয়ে ঘূর্ণিত হতে থাকে, সে অনন্তের অভিমুখে চলে না, সে একই বিন্দুর চারি দিকে ঘানির বলদের মতো পাক খায়। সে চলে অথচ এগোয় না- সুতরাং এ চলায় কেবল তার কষ্ট, এতে তার সার্থকতা নয় । তাই বলছিলুম এই সংকট থেকে উদ্ধার পেতে হবে। অহং-এর সঙ্গে একেবারে এক হয়ে মিলে যাব না, তার সঙ্গে বিচ্ছেদ রাখব। দান করব, কর্মকরব, কিন্তু অহং যখন সেই কর্মের ফল হতে করে তাকে লেহন করে দংশন করে নাচতে নাচতে উপস্থিত হবে তখন তার সেই উচ্ছিষ্ট ফলকে কোনোমতেই গ্রহণ করব না । কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। orps