পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छिन्ि 2 8 তিটুঠং চরং নিসিন্নো বা সয়ানো বা যাবতসস বিগত মিদ্ধে এতং সতিং অধিটঠেযাং ব্ৰহ্মমেতং বিহারমিধমাহু । যখন দাড়িয়ে আছ বা চলছ, বসে আছ বা শুয়ে আছ, যে পর্যন্ত না নিদ্ৰা আসে সে পর্যন্ত এই প্রকার স্মৃতিতে অধিষ্ঠিত হয়ে থাকাকে ব্ৰহ্মাবিহার বলে । অপরিমিত মানসকে প্রতিভাবে মৈত্রীভাবে বিশ্বলোকে ভাবিত করে তোলাকে ব্ৰহ্মবিহার বলে । সে গ্ৰীতি সামান্য গ্ৰীতি নয়— মা তীর একটিমাত্র পুত্রকে যেরকম ভালোবাসেন সেইরকম ভালোবাসা । ব্ৰহ্মের অপরিমিত মানস যে বিশ্বের সর্বত্রই রয়েছে, এক পুত্রের প্রতি মাতার যে প্ৰেম সেই প্রেম যে তীর সর্বত্র । তারই সেই মানসের সঙ্গে মানস, প্রেমের সঙ্গে প্রেম না মেশালে সে তো ব্ৰহ্মবিহার হল না । কথাটা খুব বড়ো। কিন্তু বড়ো কথাই যে হচ্ছে। বড়ো কথাকে ছোটাে কথা করে তো লাভ নেই। ব্ৰহ্মকে চাওয়াই যে সকলের চেয়ে বড়োকে চাওয়া । উপনিষৎ বলেছেন : ভূমিত্বে বিজিঞ্জিসিতব্যঃ । সেই চাওয়া সেই পাওয়ার রূপটা কী সে তো স্পষ্ট করে পরিষ্কার করে সম্মুখে ধরতে হবে । ভগবান বুদ্ধ ব্ৰহ্মবিহারকে সুস্পষ্ট করে ধরেছেন- তাকে ছোটাে করে ঝাপসা করে সকলের কাছে চলনসই করবার চেষ্টা করেন নি । অপরিমিত মানসে অপরিমিত মৈত্রীকে সর্বত্র প্রসারিত করে দিলে ব্ৰহ্মের বিহার ক্ষেত্রে ব্ৰহ্মের সঙ্গে মিলন হয় । এই তো হল লক্ষ্য । কিন্তু এ তো আমরা একেবারে পারব না । এই দিকে আমাদের প্রত্যহ চলতে হবে । এই লক্ষ্যের সঙ্গে তুলনা করে প্রত্যহ বুঝতে পারব আমরা কতদূর অগ্রসর হলুম। ঈশ্বরের প্রতি আমার প্ৰেম জন্মাচ্ছে কি না সে সম্বন্ধে আমরা নিজেকে নিজে ভোলাতে পারি । কিন্তু সকলের প্রতি আমার প্রেম বিস্তৃত হচ্ছে কি না, আমার শক্ৰতা ক্ষয় হচ্ছে কি না, আমার মঙ্গলভােব বাড়ছে কি না, তার পরিমাণ স্থির করা শক্ত নয়। একটা কোনো নির্দিষ্ট সাধনার সুস্পষ্ট পথ পাবার জন্যে মানুষের একটা ব্যাকুলতা আছে। বুদ্ধদেব এক দিকে উদ্দেশ্যকে যেমন খর্ব করেন নি তেমনি তিনি পথকেও খুব নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন । কেমন করে ভাবতে হবে এবং কেমন করে চলতে হবে তা তিনি খুব স্পষ্ট করে বলেছেন । প্ৰত্যহ শীলসাধন-দ্বারা তিনি আত্মাকে মোহ থেকে মুক্ত করতে উপদেশ দিয়েছেন এবং মৈত্রীভাবনা-দ্বারা আত্মাকে ব্যাপ্ত করবার পথ দেখিয়েছেন । প্রতিদিন এই কথা স্মরণ করো যে, আমার শীল অখণ্ড আছে, অচ্ছিদ্র আছে— এবং প্রতিদিন চিত্তকে এই ভাবনায় নিবিষ্ট করো যে, ক্রমশ সকল বিরোধ কেটে গিয়ে আমার আত্মা সর্বভূতে প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ এক দিকে বাধা কাটছে আর-এক দিকে স্বরূপ লাভ হচ্ছে। এই পদ্ধতিকে তো কোনোক্রমেই শূন্যতালাভের পদ্ধতি বলা যায় না। এই তো নিখিললাভের পদ্ধতি, এই তো আত্মলাভের পদ্ধতি, পরমাত্মলাভের পদ্ধতি । SS DS