পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\rig \ხ(No Y করছি, উদ্ধত হয়ে আঘাত পাচ্ছি। কোনােমতেই সেই নম্রতা মনের মধ্যে আনতে পারছি নে যার দ্বারা আত্মসমর্পণ অত্যন্ত সহজ এবং মধুর হয় । এই বাধা। যখন স্পষ্ট রয়েছে দেখতে পাচ্ছি তখন আমার প্রকৃতিতে ব্ৰহ্মের সঙ্গে মিলনের বাধা যে অসংখ্য আছে তাতে কি আর সন্দেহ আছে ? যাতে আমাকে একটি মানুষের সঙ্গেও সম্পূর্ণভাবে মিলতে দেবে না। তাতেই যে ব্রহ্মের সঙ্গেও মিলনের বাধা স্থাপন করবে। যাতে প্রতিবেশী পর হবে তাতে তিনিও পর হবেন, যাতে শক্রকে আঘাত করব তাতে তাকেও আঘাত করব। এইজনা ব্ৰহ্মবিহারের কথা বলবার সময় সংসারের কোনাে কথাকেই এতটুকু বাঁচিয়ে বলবার জো নেই। যারা মহাপুরুষ তারা কিছুই বাঁচিয়ে বলেন নি— হাতে রেখে কথা কন নি । তারা বলছেন, একেবারে নিঃশেষে মরে তবে তাতে বেঁচে উঠতে হবে । তাদের সেই পথ অবলম্বন করে প্রতিদিন অহংকারের দিকে, স্বার্থের দিকে, আমাদের নিঃশেষে মরতে হবে এবং মৈত্রীর দিকে, প্রেমের দিকে, পরমাত্মার দিকে, অপরিমাণরূপে বাঁচতে হবে । যারা এই মহাপথে যাত্রা করবার জন্য মানবকে নির্ভর দিয়েছেন, একান্ত ভক্তির সঙ্গে প্ৰণাম করে তাদের শরণাপন্ন হই । ՏՀ (ԵՀ নীড়ের শিক্ষা এই অপরিমাণ পথটি নিঃশেষ না করে পরমাত্মার কোনো উপলব্ধি নেই, এ কথা বললে মানুষের চেষ্টা অসাড় হয়ে পড়ে। এতদিন তা হলে খোরাক কী % মানুষ বাচবে কী নিয়ে ? শিশু মাতৃভাষা শেখে কী করে ? মায়ের মুখ থেকে শুনতে-শুনতে খেলতে-খেলতে আনন্দে শেখে | যতটুকুই সে শেখে— ততটুকুই সে প্রয়ােগ করতে থাকে। তখন তার কথাগুলি আধাে-আধাে, ব্যাকরণ-ভুলে পরিপূর্ণ । তখন সেই অসম্পূর্ণ ভাষায় সে যতটুকু ভােব ব্যক্তি করতে পারে তাও খুব সংকীর্ণ | কিন্তু তবু শিশুবয়সে ভাষা শেখবার এই একটি স্বাভাবিক উপায় । শিশুর ভাষার এই অশুদ্ধতা এবং সংকীর্ণতা দেখে যদি শাসন করে দেওয়া যায় যে যতক্ষণ পর্যন্ত নিঃশেষে ব্যাকরণের সমস্ত নিয়মে না পাকা হতে পারবে ততক্ষণ ভাষায় শিশুর কোনো অধিকার থাকবে না, ততক্ষণ তাকে কথা শুনতে বা পড়তে দেওয়া হবে না, এবং সে কথা বলতেও পারবে না— তা হলে ভাষাশিক্ষা তার পক্ষে যে কেবল কষ্টকর হবে তা নয়, তার পক্ষে অসাধ্য হয়ে উঠবে । শিশু মুখে মুখে যে ভাষা গ্রহণ করছে, ব্যাকরণের ভিতর দিয়ে তাকেই আবার তাকে শিখে নিতে হবে, সেটাকে সর্বত্র পাকা করে নিতে হবে, কেবল সাধারণভাবে মোটামুটি কাজ চালাবার জন্যে নয়, তাকে গভীরতর উচ্চতর ব্যাপকতর ভাবে শোনা বলা ও লেখায় ব্যবহার করবার উপযোগী করতে হবে বলে রীতিমত চর্চার দ্বারা শিক্ষা করতে হবে । এক দিকে পাওয়া আর-এক দিকে শেখা ৷ পাওয়াটা মুখের থেকে মুখে, প্ৰাণের থেকে প্রাণে, ভাবের থেকে ভাবে ; আর শেখাটা নিয়মে, কর্মে— সেটা ক্রমে ক্রমে, পদে পদে । এই পাওয়া এবং শেখা দুটােই যদি পাশাপাশি না চলে, তা হলে হয় পাওয়াটা কাচা হয়, নয় শেখাটা নীরস ব্যর্থ হতে থাকে { বুদ্ধদেব কঠোর শিক্ষকের মতো দুর্বল মানুষকে বলেছিলেন, ‘এরা ভারি ভুল করে, কাকে কী বোঝে, কাকে কী বলে তার কিছুই ঠিক নেই । তার একমাত্র কারণ এরা শেখবার পূর্বেই পাবার কথা তোলে । অতএব আগে এরা শিক্ষাটা সমাধা করুক, তা হলে যথাসময়ে পাবার জিনিসটা এরা আপনিই পাবে- আগেভাগে চরম কথাটার কোনো উথাপনমাত্র এদের কাছে করা হবে না ।” কিন্তু ঐ চরম কথাটি কেবল যে গমস্থান তা তো নয়, ওটা যে পাথেয়ও বটে। ওটি কেবল স্থিতি দেবে তা নয়, ও যে গতিও দেবে । Գ } }8 Հ