পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

svo ኽ፡ রবীন্দ্র-রচনাবলী না-শোনার ধন, না-বোঝার ধন কোথায় ? যা অনাদি বলেই অনন্ত, যা হয় না বলেই যায় না, যাকে পাই নে বলেই হারাই নে, যা আমাকে পেয়েছে বলেই আমি আছি, সেই অশেষের মধ্যে নিজেকে নিঃশেষ করবার জন্যেই আত্মা কঁদছে। সেই অশেষকে সশেষ করতে চায় এমন ভয়ংকর নির্বোধি সে নয়। যাকে আশ্রয় করবে তাকে আশ্রয় দিতে চায় এমন সমূলে আত্মঘাতী নয়। ৪ বৈশাখ হওয়া পাওয়া মানেই আংশিকভাবে পাওয়া । প্রয়োজনের জন্যে আমরা যাকে পাই তাকে তো কেবল প্রয়োজনের মতোই পাই, তার বেশি তো পাই নে। অন্ন কেবল খাওয়ার সঙ্গে মেলে, বস্ত্ৰ কেবল পরার সঙ্গেই মেলে, বাড়ি কেবল বাসের সঙ্গে মেলে। এদের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ ঐ সকল ক্ষুদ্র প্রয়োজনের সীমাতে এসে ঠেকে, সেটাকে আর লঙঘন করা যায় না । এইরকম বিশেষ প্রয়োজনের সংকীর্ণ পাওয়াকেই আমরা লাভ বলি । সেইজন্যে ঈশ্বরকে লাভের কথা যখন ওঠে তখনো ভাষা এবং অভ্যাসের টানে ঐরকম লাভের কথাই মনে উদয় হয় । সে যেন বিশেষ মন্দিরে বা বিশেষ কল্পনায় দর্শন । কিন্তু পাওয়া বলতে যদি আমরা এই বুঝি তবে ঈশ্বরকে পাওয়া হতেই পারে না। আমরা যা কিছুকে পেলুম বলে মনে করি সে আমাদের ঈশ্বর নয়। তিনি আমাদের পাওয়ার সম্পূর্ণ অতীত । তিনি আমাদের বিষয়-সম্পত্তি নন | ও জায়গায় আমাদের কেবল হওয়া, পাওয়া নয় । তাকে আমরা পাব না, তার মধ্যে আমরা হব | আমার সমস্ত শরীর মন হৃদয় নিয়ে আমি কেবলই হয়ে উঠতে থাকব । ছাড়তে-ছাড়তে বাড়তে-বাড়তে মরতে—মরতে বাচাতে-বাচতে আমি কেবলই হব। পাওয়াটা কেবল এক অংশে পাওয়া, হওয়াটা যে একেবারে সমগ্রভাবে হওয়া— সে তো লাভ নয়, সে বিকাশ । ভীরু লোকে বলবে— বল কী ! তুমি ব্ৰহ্ম হবে !! এমন কথা তুমি মুখে আন কী করে ! হী, আমি ব্ৰহ্মই হব। এ কথা ছাড়া অন্য কথা আমি মুখে আনতে পারি নে। আমি অসংকোচেই বলব আমি ব্ৰহ্ম হব। কিন্তু আমি ব্ৰহ্মকে পাব এতবড়ো স্পর্ধার কথা বলতে পারি নে। তবে কি ব্ৰহ্মেতে আমাতে তফাত নেই ? মস্ত তফাত আছে । তিনি ব্ৰহ্ম হয়েই আছেন, আমাকে ব্ৰহ্ম হতে হচ্ছে। তিনি হয়ে রয়েছেন, আমি হয়ে উঠছি, আমাদের দুজনের মধ্যে এই লীলা চলছে । হয়ে থাকার সঙ্গে হয়ে ওঠার নিয়ত মিলনেই আনন্দ । নদী কেবলই বলছে আমি সমুদ্র হব। সে তার স্পর্ধ নয়— সে যে সত্য কথা, সুতরাং সেই তার বিনয় । তাই সে সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে ক্রমাগতই সমুদ্র হয়ে যাচ্ছে- তার আর সমুদ্র হওয়া শেষ शुळ •षी | বস্তুত চরমে সমুদ্র হতে থাকা ছাড়া তার আর গতিই নেই। তার দুই দীর্ঘ উপকূলে কত খেতি কত শহর কত গ্রাম কত বন আছে তার ঠিক নেই। নদী তাদের তুষ্ট করতে পারে, পুষ্ট করতে পারে, কিন্তু তাদের সঙ্গে মিলে যেতে পারে না। এইসমস্ত শহর গ্রাম বনের সঙ্গে তার কেবল আংশিক সম্পর্ক । নদী হাজার ইচ্ছা করলেও শহর গ্রাম বন হয়ে উঠতে পারে না । সে কেবল সমুদ্রই হতে পারে। তার ছোটাে সচল জল সেই বড়ো আচল জলের একই জাত । এইজন্যে তার সমস্ত উপকূল পার হয়ে বিশ্বের মধ্যে সে কেবল ঐ বড়ো জলের সঙ্গেই এক হতে ምስlርg |