পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন どbr> সে সমুদ্র হতে পারে, কিন্তু সে সমুদ্রকে পেতে পারে না। সমুদ্রকে সংগ্রহ করে এনে নিজের কোনো বিশেষ প্রয়োজনে তাকে কোনো বিশেষ গুহা-গহবরে লুকিয়ে রাখতে পারে না। যদি কোনো ছােটাে জলকে দেখিয়ে সে মূঢ়ের মতো বলে “হা, সমুদ্রকে এইখানে আমি নিজের সম্পত্তি করে রেখেছি, তাকে উত্তর দেব, ‘ও তোমার সম্পত্তি হতে পারে, কিন্তু ও তোমার সমুদ্র নয়। তোমার চিরন্তন জলধারা এই জলাটাকে চায় না, সে সমুদ্রকেই চায়। কেননা সে সমুদ্র হতে চাচ্ছে, সে সমুদ্রকে পেতে চাচ্ছে না।” আমরাও কেবল ব্ৰহ্মই হতে পারি, আর কিছুই হতে পারি নে। আর কোনো হওয়াতে তো আমরা সম্পূর্ণ হই নে। সমস্তই আমরা পেরিয়ে যাই ; পেরোতে পারি। নে ব্ৰহ্মকে । ছোটাে সেখানে বড়ো হয়। কিন্তু তার সেই বড়ো হওয়া শেষ হয় না, এই তার আনন্দ । আমরা এই আনন্দেরই সাধনা করব ! আমরা ব্ৰহ্মে মিলিত হয়ে অহরহ কেবল ব্ৰহ্মই হতে থাকব । যেখানে বাধা পাব সেখানে হয় ভেঙে নয় এড়িয়ে যাব। অহংকার স্বাৰ্থ এবং জড়তা যেখানে নিস্ফল বালির তৃপ হয়ে পথরোধ করে দাঁড়াবে সেখানে প্রতিমুহূর্তে তাকে ক্ষয় করে ফেলব। সকালবেলায় এইখানে বসে যে একটুখানি উপাসনা করি, এই দেশকলবদ্ধ আংশিক জিনিসটাকে আমরা যেন সিদ্ধি বলে ভ্ৰম না করি। একটু রস, একটু ভাব, একটু চিন্তাই ব্ৰহ্ম নয়। এইটুকুমাত্রকে নিয়ে কোনোদিন জমছে কোনোদিন জমছে না বলে খুঁতখুঁত কোরো না। এই সময় এবং এই অনুষ্ঠানটিকে একটি অভ্যস্ত আরামে পরিণত করে সেটাকে একটা পরমাৰ্থ বলে কল্পনা কোরো না। সমস্ত দিন সমস্ত চিন্তায় সমস্ত কাজে একেবারে সমগ্ৰ নিজেকে ব্রহ্মের অভিমুখে চালনা করোউলটাে দিকে নয়, নিজের দিকে নয়, কেবলই সেই ভূমীর দিকে, শ্রেয়ের দিকে, অমৃতের দিকে। সমুদ্র নদীর মতো তীর সঙ্গে মিলিত হও- তা হলে তোমার সমস্ত সত্তার ধারা কেবলই তিনিময় হতে থাকবে, কেবলই তুমি ব্ৰহ্ম হয়ে উঠবে। তা হলে তুমি তোমার সমস্ত জীবন দিয়ে সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে জানতে পারবে ব্ৰহ্মই তোমার পরম গতি, পরম সম্পৎ, পরম আশ্রয়, পরম আনন্দ, কেননা তাতেই তোমার পরম হওয়া | ৬. বৈশাখ भूक्लि এই যে সকলবেলাটি প্রতিদিন আমাদের কাছে প্রকাশিত হয়। এতে আমাদের আনন্দ অল্পই। এই সকল আমাদের অভ্যাসের দ্বারা জীৰ্ণ হয়ে গেছে । অভ্যাস আমাদের নিজের মনের তুচ্ছতা দ্বারা সকল মহৎ জিনিসকেই তুচ্ছ করে দেয়। সে নাকি নিজে বদ্ধ, এইজন্যে সে সমস্ত জিনিসকেই বদ্ধ করে দেয়। আমরা যখন বিদেশে বেড়াতে যাই তখন কোনাে নূতন পৃথিবীকে দেখতে যাই নে। এই মাটি এই জল এই আকাশকেই আমাদের অভ্যাস থেকে বিমুক্ত করে দেখতে যাই। আবরণটাকে ঘুচিয়ে এই পৃথিবীর উপরে চােখ মেললেই এই চিরদিনের পৃথিবীতেই সেই অভাবনীয়কে দেখতে পাই যিনি কোনােদিন পুরাতন নন। তখনই আনন্দ পাই । যে আমাদের প্রিয়, অভ্যাস তাকে সহজে বেষ্টন করতে পারে না। এইজন্যই প্রিয়জন চিরদিনই অভাবনীয়কে অনন্তকে আমাদের কাছে প্রকাশ করতে পারে। তাকে যে আমরা দেখি সেই দেখাতেই আমাদের দেখা শেষ হয় না— সে আমাদের দেখা শোনা আমাদের সমস্ত বােধকেই ছাড়িয়ে বাকি থাকে | এইজন্যেই তাতে আমাদের আনন্দ । তাই উপনিষৎ— আনন্দরূপমমৃতং— ঈশ্বরের আনন্দরূপকে অমৃত বলেছেন। আমাদের কাছে যা