পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vdbt রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রথমে বনে গিয়ে রাম চিত্ৰকূট পৰ্বতে যখন আশ্রয় গ্রহণ করলেন, তিনি সুরম্যমাসাদ্য তু চিত্রকূটং নদীঞ্চ তাং মাল্যবতীং সুতীৰ্থাং ননন্দ হৃষ্টা মৃগপক্ষিজুষ্টং জহীে চ দুঃখং পুরবিপ্রবাসাৎ ৷ সেই সুরম্য চিত্রকট, সেই সুতীর্থ মাল্যবতী নদী, সেই মৃগপক্ষিসেবিতা বনভূমিকে প্রাপ্ত হয়ে পুরবিপ্রবাসের দুঃখকে ত্যাগ করে হৃষ্টমনে রাম আনন্দ করতে লাগলেন । দীর্ঘকালোষিতস্তস্মিন গিরেী গিরিবিনপ্ৰিয়ঃ— গিরিবীনপ্রিয় রাম দীর্ঘকাল সেই গিরিতে বাস করে একদিন সীতাকে চিত্রকূটশিখর দেখিয়ে বলছেন— ন রাজ্যভ্রংশনং ভদ্ৰে ন সুহৃদ্ভিার্কিনাভবঃ মনো মে বাধতে দৃষ্ট্র রমণীয়মিমং গিরিম। রমণীয় এই গিরিকে দেখে রাজ্যভ্রংশনও আমাকে দুঃখ দিচ্ছে না, সুহৃদগণের কাছ থেকে দূরে বাসও আমার পীড়ার কারণ হচ্ছে না। সেখান থেকে রাম যখন দণ্ডকারণ্যে গেলেন যেখানে গগনে সূৰ্য্যমণ্ডলের মতো দুৰ্দর্শ প্ৰদীপ্ত তাপসাশ্রমমণ্ডল দেখতে পেলেন । এই আশ্রম শরণ্যং সর্বভূতানাম। ইহা ব্ৰাহ্মীলক্ষ্মী-দ্বারা সমাবৃত ৷ কুটিরগুলি সুমার্জিত, চারি দিকে কত মৃগ কত পক্ষী । রামের বনবাস এমনি করেই কেটেছিল- কোথাও বা রমণীয় বনে, কোথাও বা পবিত্ৰ তপোবনে । রামের প্রতি সীতার ও সীতার প্রতি রামের প্রেম তাদের পরস্পর থেকে প্রতিফলিত হয়ে চারি দিকের মৃগ পক্ষীকে আচ্ছন্ন করেছিল । তাদের প্রেমের যোগে তারা কেবল নিজেদের সঙ্গে নয়, বিশ্বলোকের সঙ্গে যোগযুক্ত হয়েছিলেন । এইজন্য সীতাহরণের পর রাম সমস্ত অরণ্যকেই আপনার বিচ্ছেদবেদনার সহচর পেয়েছিলেন । সীতার অভাব কেবল রামের পক্ষে নয়- সমস্ত অরণ্যই যে সীতাকে হারিয়েছে। কারণ, রামসীতার বনবাসকালে অরণ্য একটি নূতন সম্পদ পেয়েছিল— সেটি হচ্ছে মানুষের প্ৰেম । সেই প্রেমে তার পল্লবঘনশ্যামলতাকে, তার ছায়াগভীর গহনতার রহস্যকে, একটি চেতনার সঞ্চারে রোমাঞ্চিত করে তুলেছিল। শেকসপীয়রের AS You Like It নাটক একটি বনবাসকাহিনী— টেম্পেস্টও তাই, Midsummer Night's Dream 3 W:(STK SKJ | Rvä (P-rikoiski. NrIGrk syy g প্রবৃত্তির লীলাই একেবারে একান্ত— অরণ্যের সঙ্গে সৌহার্দ্য দেখতে পাই নে। অরণ্যবাসের সঙ্গে মানুষের চিত্তের সামঞ্জস্যসাধন ঘটে নি। হয় তাকে জয় করবার, নয় তাকে ত্যাগ করবার চেষ্টা সর্বদাই রয়েছে ; হয় বিরোধ, নয় বিরাগ, নয় ঔদাসীন্য । মানুষের প্রকৃতি বিশ্বপ্রকৃতিকে ঠেলেঠলে স্বতন্ত্র হয়ে উঠে আপনার গৌরব প্ৰকাশ করেছে । মিলটনের প্যারাডাইস লস্ট কাব্যে আদি মানবদম্পতির স্বৰ্গারণ্যে বাস বিষয়টিই এমন যে অতি সহজেই সেই কাব্যে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির মিলনটি সরল প্রেমের সম্বন্ধে বিরাট ও মধুর হয়ে প্রকাশ পাবার কথা । কবি প্রকৃতিসৌন্দর্যের বর্ণনা করেছেন, জীবজন্তুরা সেখানে হিংসা পরিত্যাগ করে একত্রে বাস করছে তাও বলেছেন, কিন্তু মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো সাত্ত্বিক সম্বন্ধ নেই। তারা মানুষের ভোগের জন্যেই বিশেষ করে সৃষ্ট, মানুষ তাদের প্রভু। এমন আভাসটি কোথাও পাই নে যে এই আদি দম্পতি প্রেমের আনন্দ-প্রাচুর্যে তরুলতা পশুপক্ষীর সেবা করছেন, ভাবনাকে কল্পনাকে নদী গিরি অরণ্যের সঙ্গে নানা লীলায় সম্মিলিত করে তুলছেন। এই স্বৰ্গারণ্যের যে নিভৃত নিকুঞ্জটিতে মানবের প্ৰথম পিতামাতা বিশ্রাম করতেন সেখানে— Beast, bird, insector worm durst enter none ; such was their awe of man... ... ...