পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

QN 8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী আর-জন্মের চেনা-মুখ খুঁজছে। যে-উত্তাপটা ফেরার হয়েছে বলে সেদিন রব উঠল, সেই তো মাটির তলার অন্ধকারে সেঁধিয়ে কোন ঘুমিয়ে-পড়া বীজের দরজায় বসে বসে ঘা দিচ্ছিল। এমনি করেই কত অদৃশ্য ইশারার উত্তাপ এক হৃদয়ের থেকে আর-এক হৃদয়ের ফঁাকে ফাকে কোন চােরকোঠায় গিয়ে ঢোকে, সেখানে কার সঙ্গে কী কানাকানি করে জানি নে, তার পরে কিছুদিন বাদে একটি নবীন বাণী পর্দার বাইরে এসে বলে, “এসেছি।” আমার সহযাত্রী বন্ধু আমার ডায়ারি পড়ে বললেন— তুমি ধরণীর চিঠি পড়ায় আর মানুষের চিঠি পড়ায় মিশিয়ে দিয়ে একটা যেন কী গোল পাকিয়েছ। কালিদাসের মেঘদূতে বিরহী-বিরহিণীর বেদনাটা বেশ স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছে। তোমার এই লেখায় কোনখানে রূপক কোনখানে সাদা কথা বোঝা শক্ত হয়ে উঠেছে। আমি বললুম— কালিদাস যে মেঘদূত কাব্য লিখেছেন সেটাও বিশ্বের কথা । নইলে তার একপ্রান্তে নির্বাসিত যক্ষ রামগিরিতে, আর-একপ্রান্তে বিরাহিণী কেন অলকাপুরীতে ? স্বৰ্গ-মর্তের এই বিরহই তো সকল সৃষ্টিতে । এই মন্দাক্রান্তা-ছন্দেই তো বিশ্বের গান বেজে উঠছে। বিচ্ছেদের ফাকের ভৃিতির দিয়ে অণু-পরমাণু নিত্য যে অদৃশ্য চিঠি চালাচালি করে, সেই চিঠিই সৃষ্টির বাণী । স্ত্রী-পুরুষের মাঝখানেও, চোখে-চোখেই হােক, কানে-কানেই হােক, মনে-মনেই হােক, আর কাগজে-পত্রেই হােক, যে-চিঠি চলে সেও ঐ বিশ্ব-চিঠিরই একটি বিশেষ রূপ । “পূরবী” কবিতাটির পূর্ব পাঠ পলাতকায় “শেষ গান” নামে মুদ্রিত হইয়াছে। “পূরবী” ও “বিজয়ী” ১৩২৪ সালে সাময়িক পত্রে প্রকাশিত হইয়াছিল, রচনা-তারিখ পাওয়া যায় নাই । ১৩২৯ সালে সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের পরলোকগমনে কলিকাতায় যে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথ “সত্যেন্দ্ৰনাথ দত্ত”। কবিতাটি তথায় পাঠ করেন । ঐ কবিতাটির ‘দিয়ে গেলে তোমার সংগীত" (পৃ. ১০০) স্থলে ‘দিয়েছ সংগীত তব এবং “রেখে গেলে স্থলে ‘রেখে গেছ' পরিবর্তন কবি করিয়াছিলেন ; এই সংশোধন করিয়া কবিতাটি পড়িতে হইবে । (স্বতন্ত্র পূরবী গ্রন্থের আষাঢ় ১৩৫১। মুদ্রণে এই পরিবর্তন সাধিত হইয়াছে) । কবিকৃত এইরূপ আর-একটি সংশোধন, “আনমনা” কবিতার (পৃ. ১৩৬) দ্বিতীয় ছত্রে ‘মালাখানি স্থলে “মাল্যখানি । “বেঠিক পথের পথিক” কবিতাটি প্রবাসীতে প্রকাশিত হইবার সময় এই পাঠনির্দেশ মুদ্রিত ছিল : “এই কবিতাটির অকারান্ত সমস্ত শব্দকে হসন্তরূপে গণ্য করিতে হইবে ও কবিতাটি দাদরা তালে পড়িতে হইবে।” “তৃতীয়া” ও “বিরাহিণী” কবিতা দুইটি কবির পৌত্রী শ্ৰীমতী নন্দিনীর উদ্দেশে রচিত ; রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডের প্রারম্ভে নন্দিনীর চিত্র মুদ্রিত হইয়াছে। রবীন্দ্ৰ-ভবনে রক্ষিত পাণ্ডুলিপির সাহায্যে কোনো কোনো কবিতার তারিখ ও পাঠ সংশোধিত হইয়াছে। পাণ্ডুলিপির কোনো কোনো বর্জিত অংশ অতঃপর সংকলিত হইল - “সাবিত্ৰী”, ষষ্ঠ স্তবক ‘চিহ্ন নাহি রাখের পর তোমার উৎসবধারা আসা-যাওয়া দু-কুল ধ্বনিয়া নিত্য ছুটে যায় । তোমার নর্তকী-দল বিরাহমিলন ঝঞ্জনিয়া খঞ্জনী বাজায় । মুক্তি আর বন্ধ দোহে নৃত্য করে নুপুর-মন্দ্ৰিত, দুঃখ আর সুখ ।