পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় - Šl8\9 মুক্তধারা মুক্তধারা ১৩২৯ সালের বৈশাখে গ্ৰন্থকারে প্রকাশিত হয়। ঐ মাসের প্রবাসীতে নাটকটি সম্পূর্ণ প্রকাশিত হইয়াছিল। বুলি নাগকে লিখিত একটি চিঠিতে (২১ বৈশাখ ১৩২৯) ইন্দ্রনাথ মুক্তধর সম্বন্ধে আমি মুক্তধারা’ বলে একটি ছােটাে নাটক লিখেছি, এতদিনে প্রবাসীতে সেটা পড়ে থাকবে। তার ইংরেজি অনুবাদ মডার্ন রিভিউতে বেরিয়েছে। তোমার চিঠিতে তুমি machine সম্বন্ধে যে আলোচনার কথা লিখেছ সেই machine এই নাটকের একটা অংশ। এই যন্ত্র প্রাণকে আঘাত করছে, অতএব প্ৰাণ দিয়েই সেই যন্ত্রকে অভিজিৎ ভেঙেছে, যন্ত্র দিয়ে নয়। যন্ত্র দিয়ে যারা মানুষকে আঘাত করে তাদের একটা বিষম শোচনীয়তা আছে- কেননা যে-মনুষ্যত্বকে তারা মারে সেই মনুষ্যত্ব যে তাদের নিজের মধ্যেও আছে- তাদের যন্ত্রই তাদের নিজের ভিতরকার মানুষকে মারছে । আমার নাটকের অভিজিৎ হচ্ছে সেই মারনেওয়ালার ভিতরকার পীড়িত মানুষ। নিজের যন্ত্রের হাত থেকে নিজে মুক্ত হবার জন্যে সে প্রাণ দিয়েছে। আর ধনঞ্জয় হচ্ছে যন্ত্রের হাতে মােরখানেওয়ালার ভিতরকার মানুষ। সে বলছে, “আমি মারের উপরে ; মার আমাতে এসে পৌঁছয় না- আমি মারকে না-লাগা দিয়ে জিতবা, আমি মারকে না-মাের দিয়ে ঠেকাব।” যাকে আঘাত করা হচ্ছে সে সেই আঘাতের দ্বারাই আঘাতের অতীত হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু যে-মানুষ আঘাত করছে আত্মার ট্রাজেডি তারই— মুক্তির সাধনা তাকেই করতে হবে, যন্ত্রকে প্রাণ দিয়ে ভাঙবার ভার তারই হাতে । পৃথিবীতে যন্ত্রী বলছে, “মার লাগিয়ে জয়ী হব।” পৃথিবীতে মন্ত্রী বলছে, “হে মন, মারকে ছাড়িয়ে উঠে জয়ী হও ।” আর নিজের যন্ত্রে নিজে বন্দী মানুষটি বলছে, “প্রাণের দ্বারা যন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি পেতে হবে— মুক্তি দিতে হবে।” যন্ত্রী হচ্ছে বিভূতি, মন্ত্রী হচ্ছে ধনঞ্জয়, আর মানুষ হচ্ছে অভিজিৎ। ‘মুক্তধারার পূর্বকল্পিত নাম ছিল ‘পথ ; শ্ৰীমতী রানু অধিকারীকে একটি চিঠিতে (৪ মাঘ ১৩২৮) রবীন্দ্রনাথ লিখিতেছেন আমি সমস্ত সপ্তাহ ধরে একটা নাটক লিখছিলুম— শেষ হয়ে গেছে, তাই আজ আমার ছুটি । এ নাটকটা ‘প্ৰায়শ্চিত্ত' নয়, এর নাম ‘পথ’। এতে কেবল প্ৰায়শ্চিত্ত নাটকের সেই ধনঞ্জয় বৈরাগী আছে আর কেউ নেই- সে গল্পের কিছু এতে নেই, সুরমাকে এতে পাবে না।” চার অধ্যায় চার অধ্যায় ১৩৪১ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । চার অধ্যায়ের প্রথম সংস্করণে রবীন্দ্রনাথের নিম্নমুদ্রিত ভূমিকাটি প্রকাশিত হইয়াছিল : আভাস একদা ব্ৰহ্মবান্ধব উপাধ্যায় যখন Twentieth Century মাসিকপত্রের সম্পাদনায় নিযুক্ত তখন সেই পত্রে তিনি আমার নূতন-প্রকাশিত নৈবেদ্য গ্রন্থের এক সমালোচনা লেখেন। তৎপূর্বে আমার কোনাে কাব্যের এমন অকুষ্ঠিত প্রশংসাবাদ কোথাও দেখি নি। সেই উপলক্ষে তীর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় । তিনি ছিলেন রোমান ক্যাথলিক সন্ন্যাসী, অপর পক্ষে, বৈদান্তিক— তেজস্বী, নিভীক, ত্যাগী, বহুশ্রুত ও অসামান্য প্রভাবশালী। অধ্যািত্মবিদ্যায় তীর অসাধারণ নিষ্ঠ ও ধীশক্তি আমাকে তঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আকৃষ্ট করে । শান্তিনিকেতন আশ্রমে বিদ্যােয়তন প্রতিষ্ঠায় ঠাকেই আমার প্রধান সহযােগী পাই। এই | ১০ ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী, পত্র ৪৩