Նյ-Ե- রমা তৃতীয় অঙ্ক জ্যাঠাইমা । মানিস নে কি রে? এ কি মিছে কথা, না, জাত-ভেদ নেই যে তুই মানিস নে ? রমেশ । আছে তা’ মানি, কিন্তু ভাল বলে মানি নে । এর থেকে কত মনোমালিন্ত, কত হানাহানি—মানুষকে ছোট কোরে অপমান করবার ফল কি তুমি দেখতে পাও না জ্যাঠাইম ? সে দিন অর্থাভাবে দ্বারিক ঠাকুরের প্রায়শ্চিত্ত হয় নি বলে তার মৃতদেহ কেউ স্পর্শ করতে চায় নি এ কথা কি তুমি জান না ? জ্যাঠাইমা । জানি বাবা, সব জানি ; কিন্তু এর আসল কারণ জাতি-ভেদ নয় । য! সব চেয়ে বড় কারণ তা’ এই যে যাকে যথার্থ ধৰ্ম্ম বলে, একদিন যা এথানে ছিল, আজ তা পল্লী গ্রাম থেকে একেবারে লোপ পেয়েছে। আছে শুধু কতকগুলো অর্থহীন আচারের কুসংস্কার, আর তার থেকে নিরর্থক দলাদলি । রমেশ । এর কি কোন প্রতীকণর নেই জ্যাঠাইমা ? জ্যাঠাইমা। আছে বই কি বাবা। প্রতীকণর আছে শুধু জ্ঞানে । যে পথে তুই পা দিয়েছিস, শুধু সেই পথে। তাই ত তোকে বার বার বলি বাবা, তুই যেন তোর জন্মভূমিকে ত্যাগ কোরে কিছুতে যাস নে । তোর মত বাইরে থেকে যারা বড় হতে পেরেছে, তারা যদি তোরই মত গ্রামে ফিরে আস্ত, সমস্ত সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন কোরে চলে না যেত, পল্লীগ্রামের এত বড় দুৰ্গতি হোত না । তারা কখনো গোবিন্দকে মাথায় নিয়ে তোরে দূরে সরাত না। রমেশ । দূরে যেতে ত আর আমার দুঃখ নেই জ্যাঠাইমা । জ্যtঠাইমা । কিন্তু এই দুঃখই যে সবচেয়ে বড় দুঃখ রমেশ । কিন্তু আজি যদি কাজের মাঝখানেই সব ছেড়ে দিয়ে চলে যাস বাবা, তোর জন্মভূমি তোকে ক্ষমা করবে না।
পাতা:রমা-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৭
অবয়ব