রাজবাড়ি জনশূন্য, নিস্তব্ধ, অন্ধকার হয়ে পড়ে আছে,— সে রাজকুমারীও নেই, সে সখীও নেই, তখন বাপ্পার মন একেবারে ভেঙে গেল;—তিনি শান্তিহারা পাগলের মত সেই দিগ্বিজয়ী সৈন্য নিয়ে শান্তির আশায় এদেশ ওদেশ ঘুরে বেড়াতে লাগলেন;—চিতোরের প্রকাণ্ড রাজপ্রাসাদ, শূন্য সিংহাসন আর অন্দরে একা মহারাণীকে নিয়ে, পড়ে রইল!
এই রকম দেশে বিদেশে ঘুরতে ঘুরতে বাপ্পা এক দিন বল্লভীপুরে গায়নী-নগরে—যেখানে দুটি ভাইবোন গায়েব-গায়েবী পৃথিবীর আলো প্রথম দেখেছিলেন সেইখানে—উপস্থিত হলেন। এক দিন, ষোল বৎসর বয়সে, রাজা মানের সেনাপতি হয়ে বাপ্পা মুসলমান সুলতান সেলিমের সমস্ত সৈন্য এই গায়নী-নগর থেকে তাড়িয়ে দিয়ে চিতোরে ফিরে গিয়েছিলেন; আজ কত বৎসর পরে যখন কালো চুলে পাক ধরেছে, যখন চোখের কোলে কালি পড়েছে, গায়ের মাংস লোল হয়েছে, পৃথিবী যখন তাঁর কাছে অনেকটা পুরোনো হয়ে এসেছে, সেই সময় বাপ্পা আর-একবার সেই গায়নী-নগরে ফিরে এলেন। গায়নী-নগর দেখে বাপ্পার সেই দুটি ভাইবোন গায়েব-গায়েবীর গল্প মনে পড়ল।