পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
 
৮৬
 

মৈথিলী ব্রাহ্মণ ও
ত্রিপুররাজ

 এই সুযোগে ধ্বজমাণিক্যের রাণী ইন্দ্রকে রাজপদে বসাইয়া দিলেন। কপালকুণ্ডলার ন্যায় ঐ তান্ত্রিক ব্রাহ্মণের শাসনেই রাণী চলিতে লাগিলেন। মৈথিলী ব্রাহ্মণ রাজ্যে সর্ব্বে সর্ব্বা হইয়া পড়িলেন। ইন্দ্রমাণিক্যের বয়স অল্প, কাযেই ইন্দ্রের নামে ঐ ব্রাহ্মণই রাজ্য করিতে লাগিলেন। দেবমাণিক্যের পুত্র বিজয় পাছে প্রমাদ ঘটায় এই আশঙ্কায় ব্রাহ্মণ তাহার কয়েদের ব্যবস্থা করিলেন। এই ভাবে বৎসর কাল ধরিয়া ব্রাহ্মণ ত্রিপুরা রাজ্য শাসন করিতে লাগিলেন। এই কার্য্যে সুবিধার জন্য স্বদেশ মিথিলা হইতে আড়াইশত যোদ্ধা আনাইয়া রাখিলেন।

 ব্রাহ্মণের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র চলিল। প্রধান সেনাপতি দৈত্যনারায়ণের ঘরে বৈঠক বসিল, স্থির হইল ব্রাহ্মণকে বধ করিতে হইবে। ছল করিয়া ব্রাহ্মণকে দুপুর রাতে জানান হইল যে রাণীর প্রাণ সংশয় পীড়া, রাণী পায়ের ধূলো চাহিতেছেন। ব্রাহ্মণের মৃত্যু ঘনাইয়াছিল, তাই এ সংবাদে বিশ্বাস করিয়া চৌদোল চড়িয়া রাণীকে দেখিতে চলিলেন। পথে একদল সেপাহী ব্রাহ্মণকে বাঁধিয়া ফেলিল এবং শূলে চড়াইয়া মারিয়া ফেলিল। প্রাণ-বিয়োগ হইবার কালে ব্রাহ্মণ এক শ্লোক আবৃত্তি করিয়াছিলেন, ইহার অর্থ যে হেয়ালীপূর্ণ তাহা বলাই বাহুল্য—“পৃথিবীতে কমলশোভিত হংসবিরাজিত সরোবর কি নাই? কিন্তু চাতক সে দিকে না গিয়া ইন্দ্রের বারি বর্ষণের প্রতীক্ষায়ই থাকে।” শ্লোক সমাপ্তির সঙ্গেই ব্রাহ্মণের দেহ প্রাণশূন্য হইল!