পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
 
১১৬
 

অমরসাগর খননে
অমরমাণিক্য

ভুলুয়া ত্রিপুরা রাজ্য হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে। যখন অমরমাণিক্য ভুলুয়া বশে আনিতে চাহিলেন তখন ভুলুয়াপতি অমরকে নীচপদ হইতে রাজপদে উন্নীত বলিয়া অবজ্ঞা প্রদর্শন করে। ইহাতে অমরমাণিক্যের রোষানল জ্বলিয়া উঠিল। ভুলুয়া জয়ে মহারাজ স্বয়ং চারি কুমার ও ৩৬ হাজার সৈন্যসহ যাত্রা করেন। ভুলুয়া জয়ে বেগ পাইতে হয় নাই কিন্তু ঐ যুদ্ধে ভ্রমক্রমে ব্রাহ্মণ বধ হওয়ায় অমরমাণিক্য যার পর নাই ব্যথিত হন এবং তজ্জন্য প্রায়শ্চিত্ত করেন। ভুলুয়া জয়ের পর মহারাজ বাকলা আক্রমণ করেন। সে সময় বাকলা চন্দ্রদ্বীপ ঐশ্বর্য্যশালী রাজ্য ছিল, সেই যুদ্ধে বাকলাধিপতি কন্দর্পরায় নিহত হন। বাকলা জয়ে অমরমাণিক্যের ধনাগার সমৃদ্ধ হয়।

 ইতিমধ্যে অমরসাগর খনন কার্য্য সমাধা হয়। শুভদিনে মহারাজ অমর-সাগর পারে বসিয়া ব্রাহ্মণের মন্ত্রোচ্চারণযোগে অমরসাগর উৎসর্গ করেন। তখন ভূম্যাদি ষোড়শ দান অনুষ্ঠিত হয়। তারপর প্রস্তরের এক মনোহর মন্দির নির্ম্মাণ করিয়া তাহাতে শ্রীশ্রীজগন্নাথ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই উপলক্ষে নৃত্য গীতে রাজধানী মুখরিত হইয়াছিল, মন্দির প্রতিষ্ঠাকালে মহারাজ তাম্রশাসন দ্বারা চতুর্দ্দশ গ্রাম উৎসর্গ করেন, উহা বর্ত্তমানে চৌদ্দগ্রাম পরগণায় পরিগণিত হইয়াছে। বার মাসে তের পর্ব্ব উৎসব চলিতে লাগিল—উৎসবে ব্রাহ্মণ-ভোজনের বিপুল আয়োজন হইত। এই ভাবে পূজা পার্ব্বণে ষোড়শ দানে ও তুলাপুরুষে তাঁহার নির্ম্মল যশঃ দিগন্তে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল।