পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
 
১৩১

উদয়পুর অধিকার ও
অমরমাণিক্যের মৃত্যু

শেল বিদ্ধ করিল। এক এক দিন নিবিড় সন্ধ্যায় বনানীর অন্তরালে বসিয়া নিজের ভাগ্যবিপর্য্যয়ের কথা ভাবিতেন আর দর দর ধারে চক্ষের জল বহিয়া যাইত। তাঁহার নিঃশ্বাসে সমবেদনায় বনে মর্ম্মর ধ্বনি জাগিত, পাখীরা কূজনবিরত হইত, একটি একটি করিয়া আকাশে তারা ফুটিত, ভাগ্যহীন অমরের প্রতি যেন তাহারা নিষ্পলক চাহিয়া থাকিত।

 আষাঢ় মাস উপস্থিত, মহারাণীর সহিত আলাপ করিয়া মহারাজ স্থির করিলেন কুমার রাজধরকে রাজপাটে বসাইয়া তিনি বিদায় লইবেন। সেই মতে সকল অনুষ্ঠান হইল। আষাঢ় মাস, জলে ভরা নদী, মহারাজ নৌবিহার ইচ্ছা করিলেন। পালে পালে নৌকা সাজিল, মনুনদীর তীরে তেতৈয়া নামক স্থানে আসিয়া নৌবহর থামিল। স্বদেশের এই ঘোর বিপদ তাঁহার প্রাণে এতই বাজিয়াছিল যে বাঁচিতে তাঁহার আর সাধ ছিল না। তীর্থ-মৃত্যুতে চন্দ্রলোক-গতি হয় ইহা শাস্ত্রোক্তি। পবিত্র মনুনদীতে স্নাত হইয়া মৃত্যু ইচ্ছা করিয়া মহারাজ অহিফেন ভক্ষণ করেন, তাহাতেই তাঁহার মৃত্যু হয়। মনুনদীতীরে তাঁহার চিতানলে মহাদেবী সহমৃতা হইলেন। জীবনের গভীর দুঃখ চিতানলে নির্ব্বাণ লাভ করিল। ফিনিসীয় মহাবীর হ্যানিবলের ন্যায় অমরমাণিক্যের জীবন-নাট্য বড়ই বিয়োগান্তক।