পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
১৩৪
রাজধরমাণিক্য

করাইতেন। এইরূপে দেবকার্য্য সমাধা করিয়া তিনি দ্বিপ্রহরে রাজসভায় মন্ত্রী পরিবেষ্টিত হইয়া বসিতেন। আবার সন্ধ্যায় ভাগবত শ্রবণে তন্ময় থাকিতেন, মহারাজের ধর্ম্মানুরাগ এইভাবে দিন দিন বাড়িতে লাগিল, তিনি মুক্তকণ্ঠে বলিতেন অহোরাত্র হরিকীর্ত্তন শুনিয়া জীবন কাটিয়া যাউক, আর মনুষ্যজন্ম হয় কি না কে জানে! তরুণ বয়সে রাজাকে হরিনামে বিভোর দেখিয়া সার্ব্বভৌম বলিলেন—“মহারাজ বৃদ্ধ বয়সে হরিনাম অহোরাত্র করিবেন, এখন ত সে সময় আইসে নাই।” মহারাজের একথা অবশ্যই মনঃপূত হইল না।

 মহারাজের মনের ভাব ছিল—‘গৃহীত ইব কেশেষু ধর্ম্মমাচরেৎ’। তাই মুখ ফুটিয়া বলিলেন—“প্রভো, কতদিন বাঁচিব তারই ঠিক কি, যতক্ষণ শ্বাস তাছে ততক্ষণ হরিনামের সঙ্গেই এ শ্বাস ক্ষয় হউক, তাহাতে সর্ব্বপাপ ধুইয়া যাইবে এবং অন্তে হরিপদ পাইব।” তাঁহার সঙ্কল্প অনুযায়ী অষ্টপ্রহর কীর্ত্তনের ব্যবস্থা হইল, আটজন কীর্ত্তনীয়া এই কার্য্যের জন্য নিযুক্ত হইল। মহারাজ হরিনামে বিভোর হইয়া দিন কাটাইতে লাগিলেন। এক বিচিত্র বিষ্ণুমন্দির স্থাপন করিয়া মহারাজ তাহাতে বিষ্ণু আরাধনা করিতেন। অবিরত ধর্ম্মকর্ম্মে রাজধর আত্মনিয়োগ করিয়াছেন এই সংবাদ দেশ দেশান্তর ছাপাইয়া ক্রমে গৌড়েশ্বরের কানে উঠিল, তিনি দেখিলেন ইহা এক মস্ত সুযোগ। ত্রিপুরা আক্রমণের জন্য গৌড়সৈন্য সমরায়োজন করিতে লাগিল।