পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
 
১৪১
 

যশোধরমাণিক্য ও
জাহাঙ্গীর

যাইতে চাহি না। বাদশাহের অনুমতি পাইলে জীবনের বাকী দিনগুলি তীর্থপর্য্যটনে কাটাইতে ইচ্ছা করি।”

 বাদশাহ মহারাজের রাজ্যোচিত বলদৃপ্ত বাক্য শুনিয়া মুগ্ধ হইলেন এবং তীর্থদর্শনের জন্য অবাধগতির অধিকার দান করিলেন। দরবার হইতে বিদায় হইয়া যশোধরমাণিক্য সর্ব্বপ্রথমে কাশীধাম যাত্রা করিলেন, মহারাণী ও অন্যান্য পরিজন তাঁহার সঙ্গে ছিলেন। কাশীবাসে মহারাজের মনের গ্লানি দূর হইল। মণিকর্ণিকাতে গঙ্গাস্নান করিয়া বিশ্বেশ্বর অন্নপূর্ণা দর্শন করিলেন এবং মহারাণীর সহিত অন্যান্য দেবতা দর্শনে পরিতৃপ্ত হইলেন। এইভাবে কিছুকাল কাশীতে পরমানন্দে কাটাইয়া মহারাজ প্রয়াগ যাত্রা করেন, সেখানকার পিতৃকার্য্যাদি করিয়া মথুরাধামে পৌঁছেন। মথুরা, গোকুল, গিরিগোবর্দ্ধন, শ্যামকুণ্ড, রাধাকুণ্ড ও শ্রীবৃন্দাবন দর্শনে মহারাজের আনন্দের সীমা রহিল না। শ্রীবৃন্দাবনে তাঁহার জীবনের দিনগুলি ভক্তিরসে সিক্ত হইয়া কাটিতে লাগিল, কেবলি ভাবিতে লাগিলেন কতদিনে এ তনু ত্যজিয়া শ্রীকৃষ্ণের চরণ পাইব। এইভাবে ৭২ বৎসর বয়সে মহারাজ ধাম প্রাপ্ত হইলেন। মহারাজ যশোধরমাণিক্যের শেষজীবন পুরাকালের রাজর্ষিদের ন্যায়। যুদ্ধে পরাজিত হইয়াছিলেন সত্য কিন্তু যে হরিপদ-প্রাপ্তিতে মৃত্যুভয় দূর হয় সে জয় যাঁহার ভাগ্যে ঘটিয়াছিল, তিনি পরাজিত হইয়াও জয়ী।